logo corona

অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে ।। অরূপ মাহাত

 

 
সকাল সকাল হারু কাকার সঙ্গে দেখা। মুখে দাঁতন কাঠি, কাঁধে কোদাল। হনহন করে হেঁটে চলেছে মাঠের দিকে। আমাকে দেখতে পেয়েই থমকে দাঁড়ালে। বললে- দেখ্ ত বাপ, ঝড়টা কবে থামবেক। বলেই হাতে ধরে থাকা মোবাইলটার দিকে তাকালো অদ্ভুত ভাবে। কোত্থেকে জানি না, মোবাইলের প্রতি হারু কাকার মনে একটা দারুণ বিশ্বাস তৈরি হয়েছে। হারু কাকা মনে করে, মোবাইলের ভেতরে সব কিছু রয়েছে। রেশনে ক'কেজি মাল দেবে থেকে কবে, কোথায় ঝড়-বৃষ্টি হবে সব এই মোবাইল থেকে জানা যায়।
- আরও দু'দিন ঝড় হবে বলছে তো। আমার মুখে একথা শুনে কেমন যেন চুপসে গেল কাকা। মুখের বলিরেখা গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠলো। কিছুক্ষণ থেমে বললে- তাইহ্লে ত আচ্ছা ফেইর হইল্য রে বাপ। বিলের ধান কি বিলেই পড়ে রইবেক রে? হারু কাকার এই প্রশ্নের জবাবে কী বলবো খুঁজে না পেয়ে চুপ করে রইলাম আমি। আমাকে চুপ থাকতে দেখে কাকা নিজেই বলতে শুরু করলে- আইজ সাদ্দিন ধরে হিড়ের ঘাই কাটাঞ কাটাঞ থকঞে গেলি। তবু বিল আর শুখনা হইল্য নাই। এদিগে না পাছি কামিন, আর না আইসছে গাড়ি। ইবার আর ধান কাটঞে ঘর ঢুকাতে হবেক নাই রে।
- কেন কাকা, রেশনে চাল-গম পাচ্ছ, সরকার টাকাও দিচ্ছে। এই ক'দিন একটু কষ্ট করে থাকোই না। ভাইরাসের ভয় কেটে গেলে আবার নাহয় ভালো করে চাষ করবে।' কথা ঘোরানোর জন্য বললাম আমি। আসলে, চাষের কাজের অভিজ্ঞতা না থাকায় এছাড়া আর বলার মতো কিছু ছিল না আমার কাছে। তবে হারু কাকা যেন ধরে ফেললে আমার অজ্ঞতা। জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বললে- রেশন! একটা দীর্ঘশ্বাস যেন বয়ে গেল।
নিরুত্তর আমার অসহায়তা বুঝতে পেরেই বোধহয় বললে- কুড়ি কেজি চালে আর ক'দিন চলে রে বাপ। তিনটা পেট চাষ ছাড়া টাইনব্য কি করে? রেশনের তিন জনের চব্বিশ কেজি চাল গরীবের ঘরে এলে কুড়িতে ঠেকে। এ জিনিস আজ সবার গা সওয়া হয়ে গেছে। প্রতিবাদ তেমন আর হয়না এদিকে। তবে বেশ কয়েক জায়গায় মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছে। বাধ্য হয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকারও। ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে হারু কাকা বললে- নাই বাপ, এখন গাল পাড়ার সময় নাই। চললি হামি। আইজ আরঅ সকালেই মেঘ ধরঞেছে। ঘাইটা নাই কাটালে ধানগিলা বিলেই হাজে মইরবেক। বলতে বলতে এগিয়ে চলল কাকা। কথার রেশ টুকু রয়ে গেল আমার কাছে।
মাঠের আলপথে হেঁটে চলেছে হারু কাকা। দু'পাশে সোনালী ধানের ক্ষেত। ধান গাছগুলো মাথা নুইয়ে লুটিয়ে পড়ছে পায়ের কাছে। মেঘ জমছে আকাশ কালো করে। অন্ধকার নেমে আসছে চারিদিকে। ঠিক যেমন, এই অসময়ে অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে হারু কাকার মতো প্রতিটি কৃষক পরিবারে।

একক কবিতা সন্ধ্যা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...