আমার ঠাকুরদা
পথ হারিয়ে ফেলেন,
তবু অবশেষে বাড়িতেই ফিরে আসেন!
তার সঙ্গে ফিরে আসে
কতরকম আলো ও ছায়া।
সংসারের ভিতর হাওয়া ও আগুন আছে
টের পান, আর মনের ভিতর পাখি।
ঘর
ক্রমশ দিনের দিকে ফিরি,
না রাতের দিকে!
রাত পোহালে যার আসার কথা
কই, সে তো আসেনা!
মানুষ খেকো ঢুকে পড়েছে ঘরে।
এ ঘরের দরজা বন্ধ, জানলা বন্ধ।
পরাণসখা
সঙ্গী বলতে স্মৃতি ও বিস্মৃতি।
দুঃখ নেই।
ঘ্রাণশক্তি নেই, চোখেও দীর্ঘ ছায়া।
শুধু হাওয়া দিলে কেঁপে ওঠে চামড়া,
কার যেন স্পর্শ,
মনে হয় তুমি বুঝি এলে!
শিল্পী
গল্পের মতো মনে হয় তার জীবন,
তবু জীবন আসলে কোনো গল্প নয়।
যে হাত তুলি ধরে, সেই ধরেছে লাঙ্গল।
মাঠটাই এখন তার ক্যানভাস।
বীজ
বৃষ্টি এক অঙ্গীকার,
সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলতে এসেছে।
মুশকিল আসান নিয়ে যেমন আসতেন
এক পীর, আমাদের গ্রামে।
ছবি
বাবার ছবি আঁকতে বসে
মনের মতো রং পাইনা ,
পাখির কলরব পাই।
শালবন ও শিলাই ছাড়িয়ে
ওরা উড়ে যায়।
আমিও ওদের মতো মাঠ, ঘাট পেরিয়ে
অবশেষে আবার আঁকার কাছে ফিরি। দেখি একটা বটগাছ
তার আকার ছাপিয়ে
আকাশ পর্যন্ত উঠে গেছে।
সূর্যাস্তের আগে
পোড়োবাড়ির পিছনে সূর্যাস্ত হচ্ছে।
কাঁটা ঝোপের উপর
কার যেন লাল আঁচল!
দৃশ্যের ভিতর আরও কত দৃশ্য
ডুবে আছে, কত স্বপ্ন! ভাবতে ভাবতে ভেসে যাচ্ছি অনন্ত সময়ের স্রোতে।
এমন সময়
ঝোপ থেকে বেরিয়ে
আর এক ঝোপে যাচ্ছে সুবর্ণগোধিকা।
কালকেতুর মতো তাকেই শিকার করে
বাড়ি ফিরব ভাবি।
পাখি
আকাশের পাখিকে
মনে বসাতেই বেজে উঠল জলতরঙ্গ।
জলের মতো সরল অভিপ্রায়ে
বাসা বানাই। তবু ঘনিয়ে আসে
ধূসর-কালোমেঘ। পালকের নিচে লুকিয়ে রাখি দুঃখ। তাকে দিন রাত ঠোকরায়
ঘরের পাখি।
বৃত্ত
ভৈরব, ভৈরবীর আস্তানায় যাই,
আগুনের সামনে বসি।
জীবনের যা কিছু অর্জন
জ্বলে-পুড়ে গেলে যদি শান্তি আসে!
যে বৃত্তগুলো ঘিরে আছে
তাকে অতিক্রম করতেই হবে।
বাঘবন্দী খেলা থেকে বেরিয়ে
নতুন এক শুরুর প্রয়োজন।
নতুন বীজের সন্ধানে
আরো একবার
আগুনের ভিতর দিয়ে যাওয়া।
বনের ঠাকুর
তার দেহের উপর ঝরে পড়ে শালফুল।
লতাপাতার বিছানায় শুয়ে সে ভাবে
ফিরিয়ে দেবে অরণ্যের অধিকার।
বনের পশুরা তাকে চেনে,
কাছে আসে পাখি।
সংসারের সে বড়ো বালাই।
খেটেখাওয়া -কালো, ধুলোমাখা লোক
তাকে বলে, বনের ঠাকুর!