বাঘ
আমার মেয়েটি কিছুদিন থেকে বাঘের মাংস খেতে চায়৷ বাঘ বাঘ করে স্বপ্নে চিৎকার করে আমায় জড়িয়ে ধরে বলে, বাঘ— আমি বাঘের মাংস খাবো৷
বাঘ খুঁজতে বাজারে গিয়েছিলাম৷ পেলাম না৷ মেয়ে বললো, বাবা চলো জঙ্গলে যাই; জঙ্গলে অনেক বাঘ আছে৷
বউকে সাথে নিয়ে জঙ্গলে হাজির হলাম বাঘ খুঁজতে৷ অপেক্ষায় থেকে থেকে ক্লান্ত হয়ে হঠাৎ দূরে বাঘের গর্জন শুনতে পেলাম৷ সতর্ক আমি, ধীরে— ট্রিগার চেপে দিলাম গুলি বেরিয়ে লাগলো বাঘের পেটে৷ শব্দ হলো অনেক৷ কোত্থেকে যেন অতর্কিত চিৎকার এলো, ফায়ার—, একটা গুলি আমার কানের পাশ দিয়ে গেল৷ আমিও গুলি ছুঁড়লাম৷ গোলাগুলি হলো বেশ৷ দেখি— বউটা আমার পড়ে আছে, পাশে মেয়েটাও৷ চিৎকার করে ডাকলাম, বউ ওঠো—, ওঠো বাঘের বাচ্চা, কেউ উঠলো না৷ কারও ঘুম ভাঙলো না৷ শুধু পুলিশ এলো৷
আমাকে আদালতে তোলা হলো৷ বাঘ মেরেছি বলে ১২ বছরের কারাদণ্ড হলো আমার৷ শাস্তির ভারে নূয়ে পড়ে বললাম, আমার স্ত্রী–কন্যা — তাদের মৃত্যুর শাস্তি কেউ পাবে না? আদালত বললেন, অবশ্যই আমরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে৷
আগুনমুখা
পথঘাট ভালো না, মিলু চলে যাক। রাত্রি ঘনিষ্ঠ হলে জমাট বাঁধে গাঢ় অন্ধকার। পথের ভেতরে পথ, পথের ওপারে পথ। একটা ল্যাম্পপোস্ট পাবে পথে। আগুনমুখা ছেলেটা যদিও। খানিকটা জ্বালানী ওর হাতে দাও ঝিমলি। মানুষ বড় অদ্ভুত। কাজে লাগলেও লাগতে পারে।
অন্ধকুমারী
ওহে অন্ধকুমারী, তোমার মৌলকে যুক্ত করো নরম ফলজ ব্যাসার্ধে; পুরুষপাখিটির মতো আমিও কম্পনের ছায়া ফেলে এসেছি স্বপ্নসাঁতারে। আমার যোগ্যতা নেই ভেবো না; এ নিবিড় যাপনে আমিও তোমার হাতে তুলে দিতে পারি প্রকৃত মৃত্যুহীনতা।
আগুন অথবা জলের অপেরা
চিরকাল, তুমি চোখের ভেতরে হামিংবার্ড পোষো
হামিংবার্ড; ঋতুহননের কৌশল শেখা হলে
ক্রোধের বসন্ত জাগিয়ে সারাদিন, দাওয়ায় বসে
থাকো! —নাচের পুরনো মুদ্রা
আদিম কসরত থেকে ঝরে যায় অমীমাংসিত
আগুনের অপেরা। সফরকাণ্ড থেকে জলের
গভীর—নিম্নস্তরে প্রথম আকাশ দেখা যায় না।
লোকালয়ে
এত রক্তপাত ভেঙে — আধোলীন পথ ক'রে
কার কাছাকাছি যাবো, কার ঘুমের মধ্যে ঢুকে পড়বো,
কারই বা হৃদয় থেকে ছিঁটকে পড়বো তুমুল;
আলোড়িত শীতের সকাল!
বন্দুকের গভীর থেকে বেরিয়ে তোমার কাছে
ছুটে যাবো বলে ঘুম থেকে উঠি!
ইচ্ছে করছে প্রতিটি ভোরের কানে মুখ লুকিয়ে
বলি, সমূহ ঢেউ থেকে ছিঁটকে যাচ্ছে তুষারখ- মন।
পাড়ার মসজিদে মিনার থেকে মর্মতলে দীর্ঘ হাহাকারে
সকালভর্তি বেদনাদানা বিপুল আহ্লাদে ভেসে যাচ্ছে।
অনন্ত উন্মোচনের মধ্যপথে আশ্চর্য নিপুনতায় ভাঙা কাচ
লুকিয়ে ফেলছে পুরোনো প্রেমিকের জুতো।
তবু অলৌকিক পালকের মহিমাগাঁথা ধরে হাজির হলে
সমাধিমন্দিরে, আমি ভিন্ন উচ্ছ্বাসে লোকালয়ে ফিরে যাবো।
নবান্ন
জিহ্বা অব্দি নবান্ন এসেছে নেমে
ঘূর্ণায়মান ছায়া সমূহ দেয়ালে৷
─ আছড়ে পড়তে কি বাকি!
রৌদ্র লুপ্ত নগরী বেরিয়ে আসে
আবেগে, মানুষের মতোই, যেন
নড়েচড়ে ওঠে। ফলত মরে যায়।
বিশ্বরূপ
দু’চোখ মুড়িয়েছি রঙিন কফিনে; দেখতে পাচ্ছি না কিছু, বিজ্ঞাপনে; তবু রেলগাড়ি চলে রঙিন পিঁপড়ের মতো। ঘষা কাঁচের আড়ালে লুকিয়ে রেখেছি সুখানুভূতি। কী হতাশার জীবন গোঁসাই! আলোরা ডালপালা ছড়িয়েছে বন বনান্তরে। চর্বিত মগজের পাশে হাতঘড়ি ঝুলে আছে হৃদয়ের গোপন কোটরে। পাল্টে গ্যাছে ঋতুবতী শৈশবের ঘ্রাণ।
শুকনো পাতারা ঝরে পড়ার কালে মাঝপথে হাওয়া লেগে আবারো উড়ে গ্যাছে অন্য পথে, ভিন্ন গতিতে; মৃত্যুর মতো বদলে গ্যাছে তারা প্রভিন্ন আঙ্গিকে। রঙের স্রোত থেকে একটা দৃশ্য উঁকি দিচ্ছিলো; প্রতিছায়া ছিলো সেটা মানুষের — জাগরণের।
সবটা দেখতে পাই না বলে কোনো নিয়ম-কানুন নেই।
বিষাদগ্রস্ত
জ্ঞানত ছন্নছাড়া মৌমাছি হামলে পড়েছিলো, কামড়ে দিয়েছে শরীরে। সেইসব মাছিদের মাতাল কামড়ে উন্মত্ত বোকাপাখিটি সাধুর কাছে জানতে চাইলো, বিষাদগ্রস্ত মনকে আনন্দিত করার উপায় কী?
সাধু মুচকি হেসে বিষণ্ণ আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবলো, আমারই ভীষণ মন খারাপ, কাকে বলি!