বিমল মণ্ডল-এর এক গুচ্ছ কবিতা
গল্প ও নাটক
আমি যখন গল্প লিখতে বসি
আমার বাবা বলেন—
এ-সব তো নাটক চলছে।
আবার ফিরে এসে নাটক লিখতে বসলে
বাবা এসে বলেন—
এ-সব তো গল্পের মতো মনে হচ্ছে।
তারপর থেকে বাবা আমার
গল্প —নাটক, নাটক— গল্প
লিখতে বললেও
আমি আর কোন কথা না শুনে
বাবার সারাজীবনের জীবনবৃত্তান্ত সহ
আমি শুধু গল্প নাটকের মতো,
আর নাটক গল্পের মতো লিখে যেতে থাকি।
জবানবন্দি
মহামান্য আদালত
আমি কোন দোষ করিনি হুজুর
শুধু একচিমটে ভালবাসা পেতে চেয়েছিলাম
আর হৃদয়ভরা স্নেহ
আসলে শৈশবের অভাবটুকু পূরণ হোক
এইটুকু দোষ হুজুর।
সত্যি বলছি আমি কোন দোষ করিনি হুজুর
আমি শুধু সন্তান হতে চেয়েছিলাম
যেখানে প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলাম জ্যোৎস্নার রাতে
কত সহজে অতীত স্মৃতিগুলো
সমুদ্র সৈকতের কোল ঘেঁষে
নীলাচে অন্ধকারে আবেগের ঢংঙে
সমান্তরালভাবে বলে গিয়েছিল
আমি শুধু চাঁদকে সাক্ষী রেখে শপথ নিয়েছিলাম
মৃত্যুর আগে কখনো ছেড়ে যাবো না
এইটুকু দোষ হুজুর।
বিশ্বাস করুন, আমি কোন অন্যায় করিনি
আমি আমার কবিতার পাতায় সে সব লিখে গেছি
যতকিছু দিয়েছিল জীবন ভরে
আমি একটুও বেইমানি করিনি হুজুর
আমাকে নিজের করেও দূরে ছুঁড়ে দেয়
আমার চোখে জল দেখে ছলচাতুরী বলে যায়
শুধু কোনো এক ছায়ার আড়ালে
আমায় অবিশ্বাস করে হুজুর
শুধু বাবা ডাকের মাঝে নাকি
বিরক্ত প্রকাশ করে হুজুর
এইটুকু দোষ আমার হুজুর
বাবার কাছে ছেলের যাওয়া যদি অপরাধ হয়
তাহলে শাস্তি দিন হুজুর
আমি বাবার সাথে থাকতে চাই
শুধু বাবার সাথে থাকতে চাই।
পাশে দাঁড়াই
ও কেমন যেন বলছে আবোলতাবোল
চলো ওর পাশে দাঁড়াই।
ও নাকি অনেক সঙ্গ জুড়ে
গ্রাম শহর ঘুরছে এমন করে
কত মানুষ ওর প্রলোভনে পড়ে
বিষয়সম্পত্তি দিচ্ছে বিক্রি করে।
অভিনয়টা ভালোই করে জানে
চলো ওর পাশে দাঁড়াই জনে জনে।
এমন পুরুষ পেলেই সমাজ
প্রত্যক্ষ পাবে যে লাজ
মানুষ ধরার কলটা যে তার
সুকৌশলে জানে বারবার।
ঠোঁটে হাসি মনে চতুরতা
চল ওর পাশে দাঁড়িয়ে বলি কথা।
অর্থহীন
আমার বাঁচাটা অর্থহীন
শৈশব অন্ধকারে থেকে
কৈশোর ও যৌবন ভাসতে ভাসতে
একটা ক্ষীণ আলোর কাছে এলে
আমি সেই আলোয় আলোকিত হতে হতে
আবারও অন্ধকারে নেমে আসি
যে অন্ধকারে আমার অতীত
এখনো শুয়ে আছে
সেখানে আবার ফিরে যাচ্ছি
অর্থহীন জীবনের পথে।
কাঙাল
আজ আত্মাকে হত্যা করবো আমি
বিষণ্ণ মায়াজাল ছিঁড়ে এসে দাঁড়িয়েছি
অজানা পথের মাঝে
তীক্ষ্ণ মৃত্যুর মুখোমুখি
ধিক আমার বড়ো হয়ে ওঠা
ধিক নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা
শুধু মুহুর্তের সময়ে ভালোবাসা দহন হয়
যেখানে একটা স্বপ্ন রচনা করতাম
সেখানে দু'চোখের পাতায়
দিন রাত সমান হয়ে ওঠে
আমি শুধু শীর্ণ শরীরে
কাঙালের মতো...
আজ আত্মাকে হত্যা করবো আমি
সীমানা
সমতল থেকে অসমতল
পাহাড়, পর্বত নদী পেরিয়ে এগিয়ে চলেছি
কিন্তু কেন?
সহস্র প্রশ্ন মনের মধ্যে আসে আর যায়
ভাবলাম একটা সীমানার খোঁজে এতদূর?
তারপর থেকে পূর্ব -পশ্চিম,উত্তর - দক্ষিণ
সবখানেই কোলাহল শুধু বুদ্ধের কাছে!
কী আশ্চর্য!
চারিদিকে এত দু:খ,কষ্ট ও যন্ত্রণা
তবুও...
বুদ্ধের কাছে এত আনন্দ!
মনটা আনন্দে ভরে যায় শুধু এই সীমানায়!