ম্যাজিক লন্ঠন
বাড়ুজ্জেদের বাড়ি থেকে ডাল ফোঁড়নের গন্ধ ভেসে আসে।
ধুনুরি, চাবিওয়ালা, হেঁকে যায়, তাঁদের কেউ ডাকে না তেমন এখন।
কল্পনায় নিবিড় হতে পারলে তোমায় গন্ধে অনুভব করা যায়।
একলা মানুষ তায় অলসতায় কাঁথামুড়ি…
মুখোশ ছাড়া, শীতের জড়তা নিয়ে,
রাতপোশাকে ঢিলেঢালা… কী যেন লিখছি…
কাঁপা কাঁপা নদীজলে ভাসিয়ে দিচ্ছি...
হয়ত বা জীবনকুসুম।
অগুনতিবার স্পর্শ করেছি, লিখেছি অযুত কবিতা।
আজও তেমনই প্রণম্য, চন্দন আলপনা দিগন্তরেখায়
তোমার আলতাপড়া পায়ের ছাপ গুণতে গুণতে,
এ কোথায় এলাম!
কবেকার সেই নদ, হাজার বছরের অজয় স্মৃতি
এক বর্ষশেষের সকালে তোমায় দাহ করে,
ঘাটে দাঁড়িয়েছিলাম। ভেজা চুলে তখনও
চুঁইয়ে পড়া আবেগ, কান্না, শোক… সব আলুথালু।
দূরগামীতায় আমার গন্তব্য এঁকেছি চিরকাল
শুরু থেকেই নানান দুলুনিতে সামলেছ আমায়
তাতেই জমিয়েছিলাম নানান গবেটতত্ত্ব, অপারগতা।
যাত্রাবিরতিতে স্মিতমুখে হিসেব এঁকেছিলে
বুঝিয়েছিলে হিসেবখাতায় লেখা ভবিষ্যতগাঁথা। ভাবতাম,
কি হবে জিরিয়ে? দাস্তান-এ পিলসুজ, ছাইদান হয়ে?
আজ ব্যর্থ অস্ত আলোয় বসে আছি… দখিনের ব্যালকনিতে
দৈবাৎ যদি পাওয়া যায় … এক ম্যাজিক লন্ঠন অথবা জাদুকরের লাঠি ।।
দৈত্য-কাহিনি ও ভীমবেটকা
ওইখানে সারাদিন অন্ধকার চুপ করে থাকে
লাল-নীল অথবা হলুদ-সবুজ
রোদ্দুরে জেগে থাকা প্রেমিক রামধনু
পাখিমেঘ ইশারায় আজ অন্ধ।
মনে হল যেন শতাব্দীর গোড়াতেই এই ত্রস্ত পৃথিবীতে
নোনাধরা জমিতে কাদায় লুকোনো আছে কষ্টের বিষ
কবিতার অক্ষরদানা থেকে খুঁটে নেওয়া অমৃত
আর স্বর্গ থেকে ধারে নেওয়া প্রশান্তির বীজ দিয়ে
জপমালা সাজিয়ে নিয়েছি গুণে গুণে।
‘দৈত্য-কাহিনির’ প্রতিটি স্তবকে গুম থাকে আত্মঘাতী প্রেমিকের ভূত
বিমূর্ত বিষ ঢেলে আমাদের দৈত্য করে তোলে ।
নতুন সময়ে তবু প্রয়াসে থাকা ভালো
অক্ষরকণারা ঢেউ তোলে, ছবি আঁকে পাথরের বুকে
প্রস্তরযুগের মতই এখনো ভীমবেটকার শ্যাওলা দেওয়ালে
মৃত হরিণের শিকার শিকার খেলা।
নন্দিনী ও তারক সেন
স্ব-যাপিত ভবিষ্যৎ-এ পাঁচমিশালি ভদ্রতা আর কতদিন ?
হাতছানি দিইনি, ইশারা করিনি,
অপেক্ষায় থাকতে বলি নি কোনোদিন
শুধু চেতনা দিয়েছি আর চেতনা চেয়েছি বারবার।
তোমার হৃদয়ে খুঁজেছি পলাশের ছায়া,
আর লু হাওয়া ঢেকে দিয়েছে গ্রীষ্মের পূর্বাভাষ
তুমিও আমাকে নিজের ভেতরে নেওয়ার জন্যেই,
এতদিন ধরে এতবার গাছেদের জন্মবিবরণ পড়েছ।
জানলার দিকে তাকিয়েছ, জলের দিকে তাকিয়েছ,
জানতে চেয়েছো রাস্তার খুঁটিনাটি, মোহনার অভিমুখ
ধ্বস নেমেছিল যাবতীয় প্রবাদবাক্য মেনে,
সফল হয়েছে পরিচিত সাবধানবানী।
আঁকা প্রজাপতি এখনও উড়ান ভরে তোমার রিক্ততায়
খরস্রোতে লিখেছ মা নিষাদ
তোমার মেধায় মেধসের বিচরণ অথচ
সিক্ত চাহিদাপূরণে ব্যর্থ।
কিছু অক্ষর এখনও রক্তসানকিতে স্তব্ধ পাঁজরখাঁজে
আবেগে ভিজে একাকার … বন্ধ দরজা জানে।
উষ্ণতাকে চারভাঁজে পরিপাটি রেখে
অবিশ্বাসী শৈত্যকে রেখেছ জড়িয়ে … তারক সেন জানেন।