দিবসে নয়, দিনে আমরা
বাড়ির উঠোনে ভেজা শাড়ির
ফোঁটা ফোঁটা জল ,আর বাসনের ঝনঝন শব্দ।
হ্যাঁ, আসছি এক্ষুনি দিচ্ছি.......
এসবের মধ্যে থেকেও এখন আমি হয়েছি মুক্ত।
চলচ্চিত্রের কাহিনী আমাকে নিয়ে
টলিউডে বলিউডে আমি থাকি টক্কর দিয়ে।
লেখকের কলমে আমি সাহসিনী ,আমি স্নেহময়ী, আমি আদরিনি
কবিদের উদাহরনে আমি "কন্যাশ্লোক" "আমি সেই মেয়ে"
চিত্রকরের ছবিতে ভিজে কাপড় জড়ানো নিখুঁত শরীর আমার,
পড়ন্ত বেলায় বাচ্চা কোলে কাঠের বোঝা মাথায় আমার।
দেশ বলতে আমি মাতৃরূপা ভারতমাতা,
নাম সংকীর্তনে আমি করি কৃষ্ণ বন্দনা,
দুর্গা সেজে আমি দেখাতে পারি অসুর বধ।
অসহায় বৃদ্ধ পিতার শেষ সম্বলে আমি থাকতে পারি।
বেকার পুরুষের সাথে আমিও সংসার করতে পারি
সব কিছুতে দৌড় শুরু আমিও করতে পারি।
সব পারির মাঝে চাইনা নাম মাত্র দৃষ্টান্ত
সহ্য করতে পারিনা মার্চের শুরু থেকেই
নানা রূপে নারী বন্দনার প্রস্তুতি পর্ব।
যে মহিলার ছবি বিক্রি করে ব্যবসা করছো,
যাদের উদাহরণ করে ফুলের মালা পরিয়েছো,
শুধু মাত্র তাঁদের নয়, নির্দিষ্ট দিনে নয়,
পুরুষ জাতির কাছে নয়,
পালন হোক বা না হোক বিশ্ব নারী দিবস
আমরাই সৃষ্টি করতে পারি দীপ্ত প্রাণের পরশ।
প্রতিটি পরিবারে, প্রতিটি ধর্মস্থানে,
আমাদের নিজস্ব ক্ষেত্রে আমরাই নারাচ।
সম্মান চাই আমরা প্রত্যেকে , প্রতিদিন......
দিবসে নয় নিজেদের বহমান সমাজে।।
চেতনায় স্বাধীনতা
গুলি বারুদে ঝাঁঝরা হাজার হাজার লাশের
পরতে মাড়ানো রাস্তার উপর তুমি হেঁটেছিল.....
কান্নার শব্দ চেপে চেপে তুমি সীমায় পৌঁছে ছিলে
উড়িয়েছ তোমার ধ্বজা,খুব কাছাকাছি ছিল সূর্যের।
মহাকাশ থেকে মহাসাগর সবাই বলে উঠেছিল তুমি মুক্ত
দেশের মাটি আর প্রাণ দেখেছে আকাশ মুক্ত
তবুও বাড়িতে বাড়িতে গলিতে গলিতে
শিক্ষা শিল্পে সাহিত্যে চেনা অচেনার দিনে-রাতে
বিপরীত গন্ধ এখনও নানা অনুভবে........
মুক্ত স্বাদ- গন্ধের অপেক্ষায় আকাশে মেঘের আবির্ভাবে,
হয়ত বৃষ্টি নামে কোথাও কোথাও তবুও ছিটেফোঁটা
মুষল ধারে চারিদিকে বর্ষণ করো বৃষ্টি , তোমার স্বাধীন ফোঁটা।।
খরস্রোতা নদীর স্রোতের মতো,
খোলা আকাশের চোখে জন্মভূমির মতো,
প্রতিটি প্রাণের বোধ- আবেগ মুক্ত হতে চায় স্বাধীনতায়,
ঝোড়ো বাতাসের মতো নিজেদের স্বাধীন চেতনায়।
লোকটা হবে সম্পদ
কোন গলি পথ নয়
স্টেশন লাগোয়া রাজপথ,
সে পথ ধরে নানা উদ্দেশ্যে চলছি আমরা।
কখনো দুর্গন্ধে নাক ঢাকি,
নোংরা দেখে মুখ বেঁকিয়ে থাকি।
তবুও বাসের জানালার কাঁচ দিয়ে....
টোটোতে ,গাড়িতে বসে দক্ষিণ দিকে চোখ ঘুরিয়ে ,
আমার মত অনেকেই দেখে থাকে...
ভ্যাটের পাশে বসে থাকা একটা লোককে।
পরনে গামছা না লুঙ্গি বোঝা যায় না,
হলদে চোখ, লম্বা নাক স্পষ্ট চেনা যায়,
চুল ভরা মাথায় ডান হাত দিয়ে চুলকে যায়।
এখন শ্রেষ্ঠ উৎসবে বাঙালি মেতেছে
সন্ধ্যা রকমারি আলোর মালায় সেজেছে ,
রাস্তা এখন চারগুণ ব্যস্ত হয়েছে।
অনেকেই দেখেছে ভ্যাট এর পাশে--
অচেনা লোকটা উবু হয়ে বসে। ফেরার পথে অনেকেই দক্ষিণে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখেছে,
কেউ কেউ মনে মনে,
অনেকে পরিবারের সঙ্গে বলেছে--
কার বাড়ির লোক এমন উৎসবের দিনে রাস্তায় বসে আছে ?
হয়তো আপনজনেরা খুঁজে বেড়াচ্ছে !
কি খাচ্ছে ?
অন্ধকারে কত বিষধর প্রাণী আছে !
যারা ঠাঁ ঠাঁ রোদে লোকটাকে বসে থাকতে দেখে
বলেছিল সি আই ডি সেজেছে হয়তো,
তারা বজ্রের দুন্দুভিতে, মুষলধারে বৃষ্টিতে,
তারপর আলোর মধ্যেও দেখেছে,
তামাটে শরীরটা এখনো নোংরা ঘেঁটে চলেছে...
তারা নিশ্চয়ই সন্দেহ ভুলে
কয়েকজন সহানুভূতিশীল মানুষকে নিয়ে,
নিজেরাই অনুসন্ধান করতে চাইবে---
একটু এগিয়ে গিয়ে যদি লোকটার পাশে দাঁড়ায়...
হালকা সহানুভূতিতে ওর ধূসর মস্তিষ্ক উর্বর হবে।
খুব সহজেই লোকটা "মানুষ" হয়ে উঠবে।
তারপর আলোর পথ ধরে চলবে,
পরিবারের চোখের জল মুছিয়ে দিতে পারবে,
ধীরে ধীরে "মানবসম্পদে" পরিণত হবে।