স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা



pracchad2

প্রচ্ছদ – সন্দীপ দে

বিজ্ঞাপন



স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা



Card image

স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা
লবণ আইন অমান্য আন্দোলনে দাসপুরের শ্যামগঞ্জ ।। বঙ্কিম দে
Card image

স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা
স্বাধীনতা আন্দোলনে চন্দ্রকোণা : ১৯০৫-১৯৪২ খ্রী : ।। গণেশ দাস
Card image

স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা
কুখ্যাত ডগলাসের হত্যাকারী মহান বিপ্লবী প্রভাংশুশেখর পাল ।। নিখিলেশ ঘোষ
Card image

স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা
স্বাধীনতা আন্দোলনে নাড়াজোল রাজপরিবার ।। দেবাশিস ভট্টাচার্য
Card image

স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা
স্বাধীনতা আন্দোলনে ঘাটাল মহকুমার জমিদার ও সামন্তদের ভূমিকা ।। দেবাশিস কুইল্যা
Card image

স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা
স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা ।। উমাশঙ্কর নিয়োগী
Card image

স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা
ঘাটাল মহকুমার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ ।। অশোক পাল
Card image

স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা
অগ্নিযুগের মহান বিপ্লবী শহীদ প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য ।। নিখিলেশ ঘোষ
Card image

স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা
স্বাধীনতা আন্দোলনে চেঁচুয়ার হাট ও মৃগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ।। দুর্গাপদ ঘাঁটি
Card image

স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা
ঐতিহাসিক ফাঁসিডাঙা ।। পুলক রায়

শিক্ষক বিদ্যাসাগর ।। দেবাশিস কুইল্যা

vidyasagar
   

     'শিক্ষক' শব্দের অক্ষরগুলি বিশ্লেষণ করে পাই ; শিষ্টাচার, ক্ষমাসহিষ্ণু আর কর্তব্যপরায়ণ। এই  শব্দগুলিকে বিশ্লেষণের আলোয় ফেলে অসাধারণ কৃতিত্বের অধিকারী ও শিক্ষক হিসেবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শিক্ষামূলক কাজগুলিকে বিশ্লেষিত করতে পারি।
     বিদ্যাসাগরের অভ্যুদয় ঊনবিংশ শতকে। ঊনবিংশ শতক নবজাগরণের যুগ। ভারত পথিক রামোহন ভারতবাসীকে উদ্বুদ্ধ করলেন সমাজ সংস্কার, শিক্ষা সংস্কারের মধ্য দিয়ে। নতুন ভাবনার জন্ম হল। এই শতকের সূচনায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রতিষ্ঠা,  প্রাচ্য পাশ্চাত্য ভাষা, সাহিত্য, দর্শন ইত্যাদির মেলবন্ধনে গড়ে উঠল নতুন দৃষ্টিভঙ্গি–যা সমন্বিত করল প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যকে। ফলে মিল, বেন্থামের মতবাদ নবজাগরণে নতুন মাত্রা যোগ করল। ডিরোজিওর সমস্ত গতানুগতিকতা থেকে মুক্ত সমাজভাবনা  ও শিক্ষাব্যবস্থার প্রভাব প্রতিফলিত হল মনন জগতে। ইংরাজী শিক্ষার প্রবর্তন, যুক্তিবাদী চিন্তাভাবনা, মানবতাবোধের বিস্তার, জীর্ণ সংস্কারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা, নারী শিক্ষার স্বল্প সূচনা, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষ শিক্ষাভাবনা প্রাচ্য পাশ্চাত্যের সংমিশ্রণে মূর্ত হয়ে উঠল নবজাগরণের পটভূমিতে। ধর্মনিরপেক্ষ আধুনিক শিক্ষাবিস্তারের উদ্দেশ্যে ১৮১৭ খ্রীষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হিন্দু কলেজ‌ যাত্রা শুরু করল রামমোহনের আদর্শ অনুসারে অতীত বর্তমান, পূর্ব পশ্চিমের ভাবনার মিলনকেন্দ্র রূপে। ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগে বিদ্যাসাগর এই ভাবনার যোগ্য উত্তরাধিকার রূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করলেন। ঈশ্বরচন্দ্র যে পরিবেশ ও শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যদিয়ে রচনা করলেন তাঁর কর্মজগৎ তা আদৌ আশাব্যঞ্জক ছিল না। সংক্ষেপে বলতে গেলে পরাধীন ভারতবর্ষের মানুষ নিপীড়নের শিকার ছিল। সাধারণ জনসাধারণের জন্য শিক্ষার বিশেষ ব্যবস্থাই ছিল না। ফলে শিক্ষা একেবারেই একপেশে, সংকীর্ণ ও সীমাবদ্ধ ছিল। এই ধরনের শিক্ষা স্বভাবতই প্রকৃত মানুষ তৈরীর উপযোগী ছিলনা তাই নয় সমাজ সংস্কারেরও উদ্দেশ্য ছিল না। এমন এক পটভূমিতে দাঁড়িয়ে বিদ্যাসাগর অবতীর্ণ হয়েছেন।
     ছাত্র জীবনের শেষে কর্মজীবন শুরু করেন ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের একজন হিসাবরক্ষক ও পরে বাংলাভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে। এই সময়ে তার অসামান্য বিদ্যাবত্তা, উদ্যম, হৃদয় ও মস্তিষ্কের কিছু বিরল  গুনে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের সচিব ক্যাপ্টেন জে মার্শাল, কাউন্সিল অফ্ এডুকেশনের সচিব ড: এফ জে মোয়েট এবং আরো অনেকে মোহিত হলেন। শিক্ষক বিদ্যাসাগরের আন্তরিকতা, কর্তব্যনিষ্ঠা , নিয়মানুবর্তিতা তাঁর ব্রিটিশ ছাত্র হ্যালিডে, সিটনকার, সিসিল বীডনকেও তাঁর সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল করে তুলল।
        এই সময়ে বিদ্যাসাগর এইসব তরুণ সিভিলিয়নদের সংস্পর্শে এসে উপলব্ধি করলেন যে ইংরেজদের মধ্যে অনেক গুণ আছে, যা আহরণ করা দরকার। আরও বুঝলেন, যে দেশের জনসাধারণকে  জীর্ণ কুসংস্কার ও অশিক্ষা থেকে মুক্ত করতে হলে পাশ্চাত্য ভাষা, সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান সম্পর্কে জানতে হবে ও জীবন চর্চায় সেগুলি প্রয়োগ করতে হবে। তাই তিনি ইংরাজী, হিন্দি শিখতে শুরু করলেন। রামমোহনের সমন্বয়ী আদর্শ অর্থাৎ প্রাচ্য পাশ্চাত্য ভাবধারার মিলনের আদর্শ তাঁকে উজ্জীবিত করল। পরবর্তী সময়ে সংস্কৃত কলেজে অধ্যক্ষ পদে বৃত হওয়ার পর প্রয়োগবাদী, উপযোগিতাবাদী ও জাত শিক্ষক বিদ্যাসাগর সমগ্ৰ শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের দিকে দৃষ্টি দিলেন। তাঁর সংস্কারমূলক কাজের মধ্যে প্রথমটি হল সংস্কৃত কলেজের দ্বার জাতি নির্বিশেষে সকলের জন্য উন্মুক্ত করা। ১৮৫১খ্রীষ্টাব্দে শিক্ষাপরিষদের সেক্রেটারি  Captain F F C Hays কে একটি চিঠিতে লিখলেন - " I see no objection to the admission of other castes than Brahmanas and Vaidyas or in other words, different order of Sudras , to the Sanskrit College ." সংস্কৃত কলেজে ইংরাজী শিক্ষা প্রবর্তিত হল। পাঠক্রমের অপ্রয়োজনীয় নানা অংশকে বাদ দিয়ে আধুনিক জীবনের উপযোগী বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে উদ্যোগী হলেন। পঠন পাঠনে তাঁর বক্তব্য তিনি সরকারী মহলে পেশ করেন। এই সূত্রে ব্যালেন্টাইনের সঙ্গে তাঁর পত্র বিনিময় হয়। তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জাতীয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের জন্য ইংরাজী শিক্ষা প্রবর্তনের পক্ষে ছিলেন। ইংরাজী শিক্ষা বিষয়ে Council of Education এর সেক্রেটারি মোয়াটকে লিখলেন , "it is very clear that if the students of the Sanskrit College be made familiar with English literature , they will prove the best and the ablest contributiors to an enlightened Bengali literature . "  তবে তিনি শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষা ব্যাবহারের কথা বারবার বলেছেন।তিনি গতানুগতিক মুখস্থ বিদ্যার ওপর গড়ে ওঠা শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন। সেই স্বার্থেই শিক্ষার আত্মীকরণের জন্য সহজ করে বই লিখেছেন , পরীক্ষাব্যবস্থার সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছেন। তিনি উপলব্ধি করেছেন যে উপযুক্ত প্রশিক্ষিত শিক্ষক না থাকলে শিক্ষাবিস্তার নিরর্থক। তাই ১৮৫৪ খ্রীষ্টাব্দের ১৭ ই জুলাই খুললেন নর্ম্যাল স্কুল। আজকের সময়ে শিক্ষক - শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলি এই প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতার ফল।

        অষ্টাদশ শতকে ইউরোপের ভাববিল্পবের প্রভাব বিদ্যাসাগরের  অন্যান্য প্রতিভাও ব্যাক্তিত্বের ওপরে বেন্থাম, মিল ও কোঁতর দর্শন, রুশোর মানবতার আদর্শ, দিদোর বিচারবাদের প্রভাব ক্রিয়াশীল ছিল। তাই সমাজ-সংস্কারের আগে তিনি শিক্ষা সংস্কারের কাজে হাত দিলেন।শিক্ষকের দূরদর্শিতায় ভেবেছিলেন, শিক্ষার আলোতেই মানুষের বুদ্ধি ও বিচারবোধকে উন্নত করে তোলা সম্ভব। এই প্রসঙ্গে বিদ্যাসাগরের স্পষ্ট উদ্দেশ্য ধরা পড়ে তৎকালীন শিক্ষা অধিকর্তা মোয়াটকে লেখা চিঠির মাধ্যমে। তিনি লিখেছেন , " What we require to do extend the benefit of education to the mass of the people . Let us establish Vernacular schools , let us prepare a series of Vernacular clas books on useful and instructive subjects , let us raise up a band of men qualified to undertake the responsible duty of teachers and the object is a accomplished ." এই ভাবনাকে ভিত্তি করে বিদ্যাসাগর বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিক ভাষাভিত্তিক আদর্শ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এগুলির সংখ্যা নগন্য ছিল না। 

        প্রাথমিক শিক্ষাকে সার্বজনীন ও অবৈতনিক করার জন্য তাঁর উদ্যোগ কম ছিল না। সরকারী মহলে বিদ্যাসাগরের জনপ্রিয়তার দরুন তাঁর প্রচেষ্টায় প্রাথমিক স্তরে  পাঠক্রমের পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল। লেখা, পড়া, অঙ্ক কষা (Three Rs ) ছাড়াও পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করলেন ভূগোল, ইতিহাস, পাটীগণিত, জ্যামিতি, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, শারীরবিদ্যা, জীবনীগ্ৰন্থ, রাষ্ট্রনীতি। এই সব বিষয়ের শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বেছে  ছিলেন মাতৃভাষাকে।

        বয়স্ক শিক্ষায় বিদ্যাসাগরের অবদান স্মরনীয়। শ্রমজীবী ও কৃষিজীবী মানুষের পক্ষে বিদ্যালয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এই কথা উপলব্ধি করতে পেরেছেন বলেই বীরসিংহে প্রথম সান্ধ্য বিদ্যালয় খোলেন। পরবর্তীকালে কার্মাটারে সাঁওতালদের জন্য। এখনকার প্রথা-বহির্ভূত শিক্ষা ব্যাবস্থা বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টারই পুনঃপ্রবর্তন।

        রামমোহনের রায়ের সমাজ সংস্কারের পথে ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগে নারীমুক্তি ও নারীশিক্ষার প্রধান পুরোহিত বীরসিংহের ঈশ্বরচন্দ্র। মানবতাবাদের প্রেরণায় তিনি সমাজের দুটি অঙ্গ– পুরুষ ও নারী, উভয়েরই শিক্ষা ও স্বাধীনতার জন্য সমান উদ্যোগী ছিলেন। বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ, বাল্যবৈধব্যের অভিশাপ থেকে মুক্ত করার জন্য তিনি প্রচেষ্টা চালিয়ে গেলেন। শিক্ষা প্রসারে, নারীমুক্তি আন্দোলনের প্রধান শক্তি বিদ্যাসাগরকে বেথুন সহযোদ্ধা হিসেবে কাছে পেলেন। নারীশিক্ষা প্রসারের কাজে বিদ্যাসাগরের সহযোগী হলেন‌ রামগোপাল ঘোষ, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় ও মদন মোহন তর্কালংকার। নারী শিক্ষার জন্য ১৮৪৯ খ্রীষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত বেথুন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা Bethune সাহেবের ১৮৫২ খ্রীষ্টাব্দে মৃত্যু হলে ঐ বিদ্যালয় চালনার জন্য  বিদ্যাসাগরকে বেথুন স্কুলের সেক্রেটারি করে কমিটি গঠন করা হয়। বিদ্যাসাগরের নির্দেশে বেথুন স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের গাড়ীর সামনে লেখা হল  - 'কন্যাপ্যেবং পালনীয়া শিক্ষানীয়াতি যত্নতঃ।' অর্থাৎ ' পুত্রের মত কন্যাকেও সযত্নে পালন করতে হবে ও শিক্ষা দিতে হবে। '

        দূরদর্শী বিদ্যাসাগর শুধু নারী শিক্ষা ও বিদ্যালয় স্থাপন করেই সীমায়িত করেননি। তিনি উপলব্ধি করেছেন, শুধু বিদ্যালয় স্থাপনই যথেষ্ট নয়, শিক্ষক -শিক্ষণ প্রবর্তনও সব নয়। শিশুমনের বিকাশের ক্রম অনুযায়ী বাংলাভাষায় পরিবেশনের উপযুক্ত বই চাই। তাই 'বর্ণপরিচয়' লেখা। তিনি স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, বর্ণযোজনা, শব্দ, বাক্য ও ছোট ছোট অনুচ্ছেদ, এইভাবে ক্রমধারায় সরল থেকে জটিলে, বিশেষ থেকে সাধারণে, মূর্ত থেকে বিমূর্তে  বর্ণপরিচয়কে সাজালেন । সাধু ও চলিত ভাষার ব্যবহার পৃথক করলেন। অক্ষরের সংখ্যা সুনির্দিষ্ট করলেন।  বাংলা ভাষায় বিশেষ্য, বিশেষণ, ক্রিয়া, ক্রিয়াবিশেষণ ইত্যাদির ব্যবহারকে মনস্তত্ত্বনির্ভর ভাষা-বিজ্ঞান  নির্ভর করলেন শিশুমনের মতো করে। শব্দসমষ্টি দিয়ে বাক্য রচনা– যা বক্তব্যকে উপস্থাপিত করতে পারে এবং শব্দের সুললিত বিন্যাস যা বক্তব্যকে পাঠকের মনে গেঁথে দিতে পারে ৎ, সংক্ষেপে ভাষাকে মাধুর্যের সাথে ক্রিয়াশীল করতে পারে– এমন ব্যাকরণও তিনি দিলেন বর্ণপরিচয় প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগে। সরল বাংলায় শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যাসাগর পরিবেশন করলেন 'কথামালা'য়। নীতিউপদেশ পরিবেশনের জন্য লিখলেন 'আখ্যানমঞ্জরী '। এইভাবে শিক্ষার্থীদের বৌদ্ধিক, মানসিক ও নৈতিক জীবন গঠনের উদ্দেশ্যে ও শিক্ষার দ্বারা সামাজিক রূপান্তরের প্রত্যাশায় তিনি সংস্কার বিবর্জিত সেক্যুলার শিক্ষার প্রথম সোপানটি দৃঢ় ভিতের উপর প্রতিষ্ঠা করলেন।

        শিক্ষক বিদ্যাসাগরের শিক্ষামূলক অবদান ভারতীয় এমনকি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও তাঁর এমন কিছু উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড আছে, যা স্বল্প পরিসরে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। তাঁর অবদানের মূল্যায়ন করতে গেলে একটি কথাই মনে হয় যে আজ একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বায়নের যুগে প্রযুক্তি নির্ভর সভ্য সমাজে আরব্ধ বহু কাজ আজও বাস্তবায়িত হয়নি। বিশেষ করে শিক্ষাক্ষেত্রে অবৈতনিক সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা আজও সর্বত্রগামী নয়। দারিদ্র্য, কুসংস্কার,‌অশিক্ষা, অজ্ঞতা আজও সমাজের ব্যক্তিমানুষের পীড়ার কারণ। আজ নারীশিক্ষার অনেকখানি প্রসার ঘটলেও এখনও নারী -পুরুষ বৈষম্য সামাজিক ব্যাধি। শিক্ষার পাঠক্রম, পদ্ধতি, শিক্ষক-শিক্ষণ ব্যবস্থা যেগুলির বিজ্ঞানসম্মত ও মনস্তাত্ত্বিক ভিত্তিভূমি রচনা করেছিলেন, সেগুলির যুগোপযোগী ব্যবহারভিক্তিক পুনর্বিন্যাস এখনও কতটা হয়েছে তা ভেবে দেখার বিষয়। বাংলা ভাষার, বাংলা সাহিত্যের যে সম্ভাবনার দিকগুলির প্রতি তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন, প্রয়োগ করে দেখিয়েছেন, তারই উপর রচিত হয়েছে পরবর্তী সাহিত্যকীর্তি। বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথ এ বিষয়ে তাঁর উত্তরসূরী। তাঁর মানবতাবাদ সেক্যুলার শিক্ষা প্রসারে উদ্যোগী করেছিল। তাঁকে সেক্যুলার শিক্ষাভাবনার জনক বলা চলে। বিশেষ করে আজ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় এটির মূল্য অপরিসীম। গ্ৰামাঞ্চলে শিক্ষার প্রসার, বয়স্ক শিক্ষার আয়োজন, বৃত্তি-নির্ভর শিক্ষা, বিজ্ঞানমনস্কতা, জীবনোপযোগী শিক্ষা, মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের মধ্যদিয়ে মানুষের মনে সমাজ সচেতনতার বিকাশ বিদ্যাসাগরেরই অবদান। বাস্তববাদী, মানবপ্রেমীক বিদ্যাসাগরের ধর্ম একমাত্র মানুষের সেবা, সমাজের উত্তরণ, যার প্রধানতম হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন শিক্ষাকে। আজও সবক্ষেত্রে তাঁর ভাবনা সমান প্রাসঙ্গিক।
         এই প্রাসঙ্গিকতার আলোয় দাঁড়িয়ে আধুনিক সময়েও আজকের দিনের বিশ্লেষণ প্রয়োজন। ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার  যে বীজ রোপিত হল বিদ্যাসাগরের কর্মযজ্ঞে, আজ তা মহীরুহ।  এ প্রসঙ্গে বিদ্যাসাগর সম্পর্কে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর মত প্রনিধানযোগ্য – " .....বিদ্যাসাগরের জীবনচরিত বড় জিনিসকে ছোট দেখাবার জন্য নির্মিত যন্ত্রস্বরূপ। আমাদের দেশের মধ্যে যাঁহারা খুব বড় বলিয়া আমাদের নিকট পরিচিত, ওই গ্ৰন্থ একখানি সম্মুখে ধরিবামাত্র তাঁহারা সহসা অতিমাত্র ক্ষুদ্র হইয়া পড়েন। "
        আধুনিক ভারতের শিক্ষাব্যবস্থার যে বৃক্ষটির বীজ শিক্ষকতার মহান দায়িত্ব পালনের জন্য বিদ্যাসাগর রোপন করেছেন তার ছায়ায় দাঁড়িয়ে আমাদের নিত্যদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদিত হোক শিক্ষায় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের  পরম্পরায়।

      তথ্যসূত্র : -
      ১) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - সুবল চন্দ্র মিত্র
      ২) সমকালে বিদ্যাসাগর - স্বপন বসু
      ৩) অনলপ্রভ বিদ্যাসাগর - সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
       ৪) ক্রোড়পত্র - গণশক্তি পত্রিকা , ১৮ই আগষ্ট ২০১২
      
       
    

স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা



Card image




স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা   দেখেছেন : 1404

অগ্নিযুগের মহান বিপ্লবী শহীদ প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য ।। নিখিলেশ ঘোষ
Nikhilesh Ghosh ।। নিখিলেশ ঘোষ

"We are determined Mr burge not to allow any European to remain at Midnapore .yours is the next turn .Get yourself ready. I am not afraid of death .Each drop of my blood will give birth to hundreds of Pradyots…

Aug 5, 2022
Card image




স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা   দেখেছেন : 680

স্বাধীনতা আন্দোলনে চেঁচুয়ার হাট ও মৃগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ।। দুর্গাপদ ঘাঁটি
Durgapada Ghanti ।। দুর্গাপদ ঘাঁটি

দাসপুর থানার স্বাধীনতা আন্দোলন ও মৃগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য যেন অবিচ্ছেদ্য নাম ও সম্পর্ক। এমনই কিংবদন্তি যুগপুরুষের নাম দাসপুর তথা মেদিনীপুর জেলার স্বাধীনতা আন্দোলনেের ইতিহাসে ও আপামর মানুষের হৃদয় ফলকে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। এমন বিপ্লবী বীরের কথা আলোচনায় আনতে গেলে দাসপুরের…

Aug 5, 2022
Card image




স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা   দেখেছেন : 709

কুখ্যাত ডগলাসের হত্যাকারী মহান বিপ্লবী প্রভাংশুশেখর পাল ।। নিখিলেশ ঘোষ
Nikhilesh Ghosh ।। নিখিলেশ ঘোষ

প্রদ্যোৎ কুমার ভট্টাচার্যের অভিন্ন হৃদয় বন্ধু প্রভাংশুশেখর পাল ছিলেন একজন দৃঢ়চেতা বিপ্লবী। জীবন মৃত্যুকে সত্যিই পায়ের ভৃত্য করে যিনি মাত্র ৪ ফুট দূরত্বে দাঁড়িয়ে ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেটকে গুলিবিদ্ধ করার স্পর্ধা দেখিয়েছিলেন। যেখানে ধরা পড়ার অর্থ নিশ্চিত মৃত্যু তা জেনেই তিনি অগ্রসর…

Aug 13, 2022
Card image




স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা   দেখেছেন : 4044

স্বাধীনতা আন্দোলনে ঘাটাল মহকুমার জমিদার ও সামন্তদের ভূমিকা ।। দেবাশিস কুইল্যা
Debasish Kuila ।। দেবাশিস কুইল্যা

                আগস্ট মাস ভারতের স্বাধীনতার মাস। এই আগস্টে ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তি একটা সময়ের মাপকাঠি। স্বাধীনতা প্রাপ্তির ইতিহাস বর্ণে বর্ণে আন্দোলনের ধারাবাহিক ঘটনার স্থান, কাল ও ব্যক্তি বিশেষের উপর নির্ভর করে সংঘটিত হয়েছে। শুধু…

Aug 10, 2022
Card image




স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা   দেখেছেন : 770

স্বাধীনতা আন্দোলনে চন্দ্রকোণা : ১৯০৫-১৯৪২ খ্রী : ।। গণেশ দাস
Ganesh Das ।। গণেশ দাস

বণিকের 'মানদণ্ড', 'রাজদণ্ডে' রূপান্তরিত হওয়ার পর থেকেই ইংরেজ শাসকের অনৈতিক শাসন, অত্যাচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে দিকে দিকে বাঙালি তথা ভারতবাসী গর্জে উঠেছিল। কখনো নিয়মতান্ত্রিক পথে, কখনো সশস্ত্র সংগ্রামের পথ অবলম্বন করে বুঝিয়ে দিয়েছিল এ মাটি খুব শক্ত মাটি, স্বাধীন মাটি। এখানে…

Aug 13, 2022
Card image




স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা   দেখেছেন : 636

স্বাধীনতা আন্দোলনে নাড়াজোল রাজপরিবার ।। দেবাশিস ভট্টাচার্য
Debasish Bhattacharjee ।। দেবাশিস ভট্টাচার্য

মেদিনীপুরের ইতিহাসে সর্বপ্রথম ইংরেজ শাসন বিরোধী সাহসিকতা ও দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছিলেন নাড়াজোলের সীতারাম খান ও রানী শিরোমণী। কিন্তু ১৭৮৮ সালের পর ১৮৯৫ পর্যন্ত নাড়াজোলের জমিদাররা প্রত্যক্ষভাবে ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধাচারণ করেনি। কারণ তাঁরা বুঝেছিলেন এতবড়ো জমিদারির সুরক্ষায় ইংরেজদের সঙ্গে সরাসরি শত্রুতামূলক…

Aug 13, 2022
Card image




স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা   দেখেছেন : 742

লবণ আইন অমান্য আন্দোলনে দাসপুরের শ্যামগঞ্জ ।। বঙ্কিম দে
Bankim Dey ।। বঙ্কিম দে

  নবাব মীরকাসিম ও ইংরেজ শাসক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সন্ধির শর্ত হিসেবে পাশাপাশি দুটি চাকলা, চাকলা বর্ধমান ও চাকলা মেদিনীপুর কোম্পানির হস্তগত হয়। পরবর্তী চাকলা হিজলির তমলুক ও চেতুয়া পরগনার ভৌগোলিক ও আর্থসামাজিক সাদৃশ্য তে প্রচুর মিল ছিল। পরগনা গুলি নদী…

Aug 13, 2022
Card image




স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা   দেখেছেন : 632

ঘাটাল মহকুমার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ ।। অশোক পাল
Ashok Pal ।। অশোক পাল

অরবিন্দ মাইতি স্বাধীনতা সংগ্রামী অরবিন্দ মাইতির জন্ম দাসপুরের গোছাতি গ্রামে। তিনি ১৯২০ খ্রি. দাসপুর থানা কংগ্রেস কমিটির সম্পাদক হন। ১৯৩০ খ্রি. গান্ধীজীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে লবণ সত্যাগ্রহ ও মাদক দ্রব্য বয়কট আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মে মাসে লবণ তৈরী কেন্দ্র থেকে অরবিন্দ…

Aug 6, 2022
Card image




স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা   দেখেছেন : 591

ঐতিহাসিক ফাঁসিডাঙা ।। পুলক রায়
Pulak Roy ।। পুলক রায়

  চন্দ্রকোণা শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে পিচঢালা রাস্তার পাশে বিশাল জমি একসময় বনজঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। চারপাশে বট আর পাকুড়ের গাছ। এখানেই বড় বড় গাছে স্বাধীনতা সংগ্রামের বহু নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি যেমন হাবল ,সুবল, রাজেন্দ্র, ফাগু, যুগল ও কিশোর সহ দেশভক্ত বহু…

Jul 31, 2022
Card image




স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা   দেখেছেন : 3484

স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা ।। উমাশঙ্কর নিয়োগী
Umasankar Neogi ।। উমাশংকর নিয়োগী

                                    অগ্নিযুগে বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষিত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রিয় বিচরণ ভূমি ছিল মেদিনীপুর জেলা। খ্যাত-অখ্যাত বহু বীর শহীদের জন্ম দিয়েছে  মেদিনীপুর। এই জেলা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। হঠাৎ করে মেদিনীপুর জেলার মানুষ দেশপ্রেমিক, স্বাধীনতাকামী  হয়ে ওঠেনি-  এ তার উত্তরাধিকার সূত্রে…

Aug 10, 2022
আরও পড়ুন
«
  • 1
  • 2
  • 3
»

স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...