স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা



pracchad2

প্রচ্ছদ – সন্দীপ দে

বিজ্ঞাপন



স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা



Card image

স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা
লবণ আইন অমান্য আন্দোলনে দাসপুরের শ্যামগঞ্জ ।। বঙ্কিম দে
Card image

স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা
স্বাধীনতা আন্দোলনে চন্দ্রকোণা : ১৯০৫-১৯৪২ খ্রী : ।। গণেশ দাস
Card image

স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা
কুখ্যাত ডগলাসের হত্যাকারী মহান বিপ্লবী প্রভাংশুশেখর পাল ।। নিখিলেশ ঘোষ
Card image

স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা
স্বাধীনতা আন্দোলনে নাড়াজোল রাজপরিবার ।। দেবাশিস ভট্টাচার্য
Card image

স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা
স্বাধীনতা আন্দোলনে ঘাটাল মহকুমার জমিদার ও সামন্তদের ভূমিকা ।। দেবাশিস কুইল্যা
Card image

স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা
স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা ।। উমাশঙ্কর নিয়োগী
Card image

স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা
ঘাটাল মহকুমার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ ।। অশোক পাল
Card image

স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা
অগ্নিযুগের মহান বিপ্লবী শহীদ প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য ।। নিখিলেশ ঘোষ
Card image

স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা
স্বাধীনতা আন্দোলনে চেঁচুয়ার হাট ও মৃগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ।। দুর্গাপদ ঘাঁটি
Card image

স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা
ঐতিহাসিক ফাঁসিডাঙা ।। পুলক রায়

জাতির শিক্ষক : ঋষি রাজনারায়ণ বসু ।। প্রসূনকুমার পড়িয়া


rajnarayan

'এই ভগবদ্ভক্ত চিরবালকটির তেজঃপ্রদীপ্ত হাস্য মধুর জীবন, রোগে শোকে অপরিম্লান তাঁহার পবিত্র নবীনতা, আমাদের দেশের স্মৃতিভাণ্ডারে সমাদরের সহিত রক্ষা করিবার সামগ্রী।' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঋষি রাজনারায়ণ বসু সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেছিলেন।

         উনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি চিন্তাবিদ, সাহিত্যিক এবং শিক্ষাবিদ ছিলেন এই রাজনারায়ণ। ১৮২৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বর্তমান দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার বোড়াল গ্রামে এই বিশিষ্ট বাঙালি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা নন্দকিশোর বসু। বাংলার নবজাগরণের পথিকৃৎ রাজা রামমোহন রায়ের ব্যক্তিগত সচিব ছিলেন নন্দকিশোর। চারজন সন্তানের মধ্যে রাজনারায়ণ বড়। মায়ের কাছেই তাঁর প্রাথমিক শিক্ষালাভ। তারপর বাড়িতে পারিবারিক এক গুরুর কাছে শিক্ষালাভ করেন। সাত বছর বয়সে তিনি কলকাতায় এক পাঠশালায় ভর্তি হন। প্রথমে বৌবাজার ও পরে হেয়ার স্কুলে তিনি পাঠ গ্রহণ করেন। এরপর তিনি হিন্দু কলেজে ভর্তি হন যেটি বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত। ভারত বিখ্যাত সমস্ত মানুষ এখানে শিক্ষালাভ করেছেন। তাঁর সহপাঠীরা সব বিখ্যাত মানুষ ছিলেন। মাইকেল মধুসূদন দত্ত, প্যারিচরণ সরকার, ভূদেব মুখোপাধ্যায়। বীর বিপ্লবী শহিদ সত্যেন্দ্রনাথ বসু তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র ছিলেন। যিনি রাজসাক্ষী নরেন গোঁসাইকে হত্যার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। ১৯০৮ সালের ২৩ নভেম্বর প্রেসিডেন্সি জেলে সত্যেন্দ্রনাথের ফাঁসি হয়। যাই হোক ছাত্রাবস্থাতেই রাজনারায়ণের বিবাহ হয়। তাঁর প্রথমা স্ত্রী প্রসন্নময়ী মিত্রের সঙ্গে ১৮৪৩ সালে এবং তাঁর অকালপ্রয়াণে নিস্তারিণী দত্তের সঙ্গে ১৮৪৭ সালে রাজনারায়ণের বিবাহ হয়। তাঁর কন্যা সন্তানদের মধ্যে স্বর্ণলতা দেবী ও লজ্জাবতী দেবীর নাম জানা যায়। প্রসঙ্গত ঋষি অরবিন্দ ঘোষ হলেন ঋষি রাজনারায়ণ বসুর পৌত্র এবং কন্যা স্বর্ণলতাদেবীর পুত্র। তাঁর আরেক কন্যা লীলাবতীর বিয়েতে রবীন্দ্রনাথ গান লিখেছিলেন এবং সেই গান গেয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। ১৮৪৬ সালে তিনি ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষালাভ করেন। জাতির পিতামহ রাজনারায়ণ ব্রাহ্মধর্মের প্রচারপত্র তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার লেখক ছিলেন। ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত হবার সৌজন্যে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে সখ্য তৈরি হয় এবং দেবেন্দ্রনাথ তাঁকে উপনিষদ অনুবাদের দায়িত্ব অর্পণ করেন। তিনি সংস্কৃত কলেজের ইংরেজি ভাষার শিক্ষক পদে নিযুক্ত হন। এরপরেই তিনি মেদিনীপুর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে নিযুক্ত হন। যেটি বর্তমানে মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল হিসেবে পরিচিত। ব্রাহ্মসমাজের অন্যতম ব্যক্তিত্ব, সমাজসংস্কারক ও জাতীয়তাবাদের অন্যতম মন্ত্রগুরু রাজনারায়ণ ২১ফেব্রুয়ারি ১৮৫১ সাল থেকে ৬ মার্চ ১৮৬৬ সাল পর্যন্ত মেদিনীপুর জিলা স্কুলের কাজ করেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি কলকাতা চলে যান এবং ১৮৬৮ সালে প্রধান শিক্ষকতার কাজ থেকে পদত্যাগ করেন। মেদিনীপুরে সমাজ সংস্কার, শিক্ষা প্রসার ও নারী শিক্ষার বিস্তারে তাঁর অগ্রগণ্য ভূমিকা মেদিনীপুরবাসী শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। তিনি শুধু আদর্শ শিক্ষাব্রতী ছিলেন তাই নয়, মেদিনীপুরবাসীর কল্যাণে তিনি নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। শিক্ষকতা থেকে অবসর গ্রহণের পরের দশ বছর সেপ্টেম্বর ১৮৬৯ থেকে সেপ্টেম্বর ১৮৭৯ পর্যন্ত  কলকাতায় বসবাস করেন এবং শিক্ষা ও সমাজ সংস্কার আন্দোলনে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় কে সহযোগিতা করেন।

জিলা স্কুলের উন্নয়নে এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণে তাঁর উপদেশাবলী বিশেষ স্মরণীয়। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তাঁর পরামর্শ নিম্নরূপ:
''বাল্যকালে পিতামাতার অযত্ন ও অমনোযোগ সন্তানের অবাধ্যতার হেতু।
যাহাতে সন্তানদিগের শরীর বলিষ্ঠ, বুদ্ধি ক্রমশঃ স্ফূর্ত ও অন্তঃকরণ বিশুদ্ধ প্রীতি রসাভিসিক্ত হয়, এমত করা কর্তব্য।
তাহাদিগের শরীর পরিষ্কার রাখা ও ব্যায়ামের নিয়ম করিয়া দেওয়া কর্তব্য।
বিদ্যানুশীলনে তাহাদিগকে ক্রমে ক্রমে ভারাক্রান্ত করা উচিত। অতি লঘু ভার বা একেবারে গুরুভার দেওয়া অকর্তব্য।
তাহাদিগকে ধর্মোপদেশ দেওয়া কর্তব্য, কারণ তুমি যদি তোমার সন্তানকে ধর্মোপদেশ না দাও, তবে অধর্ম আসিয়া তাহাকে উপদেশ দিবে।
আমার বিবেচনায় চরিত্র ত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।
শিক্ষকের কর্ম অতি সম্মানের কর্ম। সে কর্মের ন্যায় আর কোন গুরুতর কর্ম জগতে নাই। একটি বিষয় না বলিয়া দেয়াতে, শিক্ষকের একটি ত্রুটিতে ছাত্রের ভবিষ্যতে লজ্জা হয়।
ছাত্রের উচিত যে, আমৃত্যু শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করা। যেহেতু মনের উপকার ন্যায় আর উপকার নাই সে ঋণ পরিশোধ করিবার উপায়ও নাই। শিক্ষা বিষয়ক আর একটি অভাব আছে, সে অভাব নীতিশিক্ষার অভাব। নীতিশিক্ষা না হইলে আমি বলি কোন শিক্ষাই হইল না।"

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনীকারের তথ্যানুসারে মেদিনীপুর জেলার তৃতীয় বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মেদিনীপুর শহরে। এই বালিকা বিদ্যালয় যা বর্তমানে অলিগঞ্জ ঋষি রাজনারায়ণ বালিকা বিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত তা প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব স্বয়ং রাজনারায়ণ বসুর। যা ১৮৬১ সালের ১৯ জুলাই মীরবাজার মহল্লায় একটি ভাড়া বাড়িতে বেসরকারিভাবে গড়ে উঠেছিল। প্রথমে হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় ও পরে হিন্দু গার্লস স্কুল হিসেবে পরিচিত ছিল। পরে সেই  বিদ্যালয়টি অলিগঞ্জে স্থানান্তরিত হলে প্রথমে অলিগঞ্জ হিন্দু স্কুল, অলিগঞ্জ হিন্দু গার্লস স্কুল, অলিগঞ্জ গার্লস স্কুল ও অলিগঞ্জ গার্লস হাই ইংলিশ স্কুল প্রভৃতি নামকরণ করা হয়। নামকরণ নিয়ে নানা মত ও বিতর্কের পর অবশেষে ১৯৭০ সালে ২০ এপ্রিল এই বালিকা বিদ্যালয়ের নাম হয় অলিগঞ্জ ঋষি রাজনারায়ণ বালিকা বিদ্যালয়।

ইংরেজি ভাষায় শিক্ষালাভ, কলকাতা সংস্কৃত কলেজের ইংরেজি বিষয়ে পাঠদান, ইংরেজি বিষয়ে অনেক গ্রন্থ রচনা ইংরেজ জমানায় তাঁর জন্ম এমনকি মৃত্যু হলেও বাংলা ভাষা চর্চা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বাংলা ভাষায় নামকরণে তাঁর গভীর প্রচেষ্টা ছিল। হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় তো ছিলই এমনকি ১৮৯৩ সালে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার জন্য প্রতিষ্ঠিত ' দি বেঙ্গল একাডেমী অব লিটারেচার' এর নামকরণ ও তার মুখপত্র ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হলে তিনি তার বিরোধিতা করেন। দি বেঙ্গল একাডেমী অব লিটারেচার উল্লেখ না করে তৎকালীন সভাপতি মহোদয়কে বঙ্গ সাহিত্য পরিষদ সভাপতি হিসেবে উল্লেখ করেন। বাংলা ভাষায় লেখা এই প্রতিবাদ পত্রখানি ১৮৯৩ সালের ২৪ ডিসেম্বরের সভায় পঠিত হয় এবং অধিকাংশ সদস্য সেটি সমর্থন করেন। শুধু বঙ্গ শব্দটির পরিবর্তে বঙ্গীয় করা হয়। বাংলা ভাষার প্রতি গভীর অনুরাগের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তাও তৎকালীন সময়ে !

তৎকালীন জেলা কালেক্টর মি.হেনরি ভিনসেন্ট বেলীর সহযোগিতা ও জেলার বিশিষ্ট জমিদার ও শিক্ষানুরাগীদের আর্থিক সহযোগিতায় ১৮৫১ সালে মেদিনীপুর শহরে গড়ে ওঠে দেশের প্রাচীনতম সাধারণ গ্রন্থাগার। বেলীর উৎসাহ ও প্রয়াসকে সম্মান জানিয়ে গ্রন্থাগারের নাম হল বেলী হল পাবলিক লাইব্রেরি। ঋষি রাজনারায়ণ বসু এই গ্রন্থাগারের প্রথম সম্পাদক। পরবর্তী সময়ে লাইব্রেরির নাম হয় রাজনারায়ণ বসু স্মৃতি পাঠাগার। জনশিক্ষা প্রসারে রাজনারায়ণ বসুর অসামান্য অবদান অনস্বীকার্য। সেই উদ্দেশ্যে তিনি শ্রমজীবী বিদ্যালয় গড়ে তোলেন।
শহরের আর এক অন্যতম প্রাচীন বিদ্যালয় হার্ডিঞ্জ স্কুল (২২।০৮।১৮৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত) এর পরিচালন সমিতির অন্যতম সদস্য ছিলেন রাজনারায়ণ বসু। বর্তমানে এই বিদ্যালয় পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নামানুসারে বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ নামে সমাদৃত । ১৮৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত মেদিনীপুর পুরসভার সরকার মনোনীত ১৪ জন সদস্যের অন্যতম ছিলেন তিনি।

বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই তিনি অনেক গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর রচিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ–হিন্দু বা প্রেসিডেন্সি কলেজের ইতিহাস, সেকাল ও একাল, আত্মচরিত খুবই প্রসিদ্ধ । রাজনারায়ণ শেষ জীবন দেওঘরে অতিবাহিত করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দেওঘরে গিয়ে রাজনারায়ণ বসুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। একসময় রবীন্দ্রনাথের গৃহশিক্ষক ছিলেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'জীবনস্মৃতি' তে উল্লেখ করেন  যে 'রাজর্ষি' গল্পে রাজনারায়ণ বসুর ছায়া আছে।
রবীন্দ্রনাথ তাঁকে চিরতারুণ্যের প্রতীক মনে করতেন। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন–“ছেলেবেলায় রাজনারায়ণ বাবুর সঙ্গে যখন আমাদের পরিচয় ছিল তখন সকল দিক হইতে তাঁহাকে বুঝিবার শক্তি আমাদের ছিল না। তাঁহার মধ্যে নানা বৈপরীত্যের সমাবেশ ঘটিয়াছিল। তখনই তাঁহার চুল দাড়ি প্রায় সম্পূর্ণ পাকিয়াছে কিন্তু আমাদের দলের মধ্যে বয়সে সকলের চেয়ে যে-ব্যক্তি ছোটো তাহার সঙ্গেও  তাঁহার বয়সের কোনো অনৈক্য ছিল না। তাঁহার বাহিরের প্রবীণতা শুভ্র মোড়কটির মতো হইয়া তাঁহার অন্তরের নবীনতাকে চিরদিন তাজা করিয়া রাখিয়া দিয়াছিল। এমন-কি প্রচুর পাণ্ডিত্যেও তাঁহার কোনো ক্ষতি করিতে পারে নাই, তিনি একেবারেই সহজ মানুষটির মতোই ছিলেন। ...একদিকে তিনি আপনার জীবন এবং সংসারটিকে ঈশ্বরের কাছে সম্পূর্ণ নিবেদন করিয়া দিয়াছিলেন, আর-একদিকে দেশের উন্নতি সাধন করিবার জন্য তিনি সর্বদাই কত রকম সাধ্য ও অসাধ্য প্ল্যান করিতেন তাহার আর অন্ত নাই। ...দেশের সমস্ত খর্বতা দীনতা অপমানকে তিনি দগ্ধ করিয়া ফেলিতে চাহিতেন।”

তিনি যে কতটা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর বহুমাত্রিক ভাবনা চিন্তার বহিঃপ্রকাশ দেখলে। একাধারে তিনি শিক্ষক, ধর্ম ও সমাজ সংস্কারক, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, স্ত্রী- শিক্ষার প্রচারক, গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠাতা, স্বাধীনতাকামী, সুরাপান নিবারণী সভার প্রতিষ্ঠাতা। তিনি চাইতেন না বাঙালি শুধু চাকরির প্রতি আগ্রহী হোক। বাঙালি ব্যবসা বাণিজ্য করুক, তিনি চাইতেন।

মেদিনীপুরের মানুষের আস্থা অর্জন করেছিলেন তিনি। সমাজ সংস্কারের পাশাপাশি তিনি নিম্নলিখিত কাজগুলো করেছিলেন ।
১। মেদিনীপুর জিলা স্কুলের উন্নতিসাধন,
২। মেদিনীপুর ব্রাহ্মসমাজের পুনঃস্থাপন,
৩। জাতীয় গৌরব সম্পাদনী সভা সংস্থাপন,
৪। সুরাপান নিবারণী সভা সংস্থাপন,
৫। বালিকা বিদ্যালয় সংস্থাপন,
৬। বক্তৃতা, ধর্মতত্ত্বদীপিকা ও ব্রাহ্মধর্মের সাধন এবং
৭। শ্রমিকদের জন্য সান্ধ্যবিদ্যালয় স্থাপন।

এহেন রাজনারায়ণ তিয়াত্তর বছর বয়সে অমৃতলোকে যাত্রা করেন। স্বল্প পরিসরে ঋষি রাজনারায়ণ বসুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে আলোচনা বাতুলতা মাত্র। তিনি মেদিনীপুরের রাজনারায়ণ হিসেবে পরিচিত হলেও পরাধীন ভারতবর্ষে বিপ্লবী সাধনার অন্যতম মন্ত্রগুরু, জাতির পিতামহ ও সমাজ সংস্কারক হিসেবে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছিলেন। সমস্ত সত্তাকে অতিক্রম করে তাঁর শিক্ষক সত্তা অনতিক্রম্য শিখরে আরোহণ করেছে। শুধু মেদিনীপুরবাসী হিসেবে নয়, শুধু বাঙালি হিসেবে নয়, একজন ভারতবাসী হিসেবে, রাজনারায়ণ বসুর উত্তরসূরি হতে পেরে আমরা গর্বিত, আমরা সম্মানিত ।


ঋণস্বীকার:
১। সেরা বাঙালি শতক-- বারিদবরণ ঘোষ, সাহিত্য ভারতী পাবলিকেশনস প্রা: লি:,কলকাতা ।
২। মেদিনীপুরের নারীশিক্ষা : অলিগঞ্জ ঋষি রাজনারায়ণ বালিকা বিদ্যালয়-- অশোক পাল, যশোড়া বিদ্যাসাগর মানব বিকাশ কেন্দ্র, পূর্ব মেদিনীপুর ।
৩। মেদিনীপুরে মনীষীগণ (রাজনারায়ণ বসু--হরিপদ মণ্ডল), প.ব.গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘ, প.মেদিনীপুর ।
৪। বিদ্যালয় বর্ষপঞ্জি, মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল ।
৫। আন্তর্জাল।

স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা



Card image




স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা   দেখেছেন : 4044

স্বাধীনতা আন্দোলনে ঘাটাল মহকুমার জমিদার ও সামন্তদের ভূমিকা ।। দেবাশিস কুইল্যা
Debasish Kuila ।। দেবাশিস কুইল্যা

                আগস্ট মাস ভারতের স্বাধীনতার মাস। এই আগস্টে ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তি একটা সময়ের মাপকাঠি। স্বাধীনতা প্রাপ্তির ইতিহাস বর্ণে বর্ণে আন্দোলনের ধারাবাহিক ঘটনার স্থান, কাল ও ব্যক্তি বিশেষের উপর নির্ভর করে সংঘটিত হয়েছে। শুধু…

Aug 10, 2022
Card image




স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা   দেখেছেন : 681

স্বাধীনতা আন্দোলনে চেঁচুয়ার হাট ও মৃগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ।। দুর্গাপদ ঘাঁটি
Durgapada Ghanti ।। দুর্গাপদ ঘাঁটি

দাসপুর থানার স্বাধীনতা আন্দোলন ও মৃগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য যেন অবিচ্ছেদ্য নাম ও সম্পর্ক। এমনই কিংবদন্তি যুগপুরুষের নাম দাসপুর তথা মেদিনীপুর জেলার স্বাধীনতা আন্দোলনেের ইতিহাসে ও আপামর মানুষের হৃদয় ফলকে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। এমন বিপ্লবী বীরের কথা আলোচনায় আনতে গেলে দাসপুরের…

Aug 5, 2022
Card image




স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা   দেখেছেন : 636

স্বাধীনতা আন্দোলনে নাড়াজোল রাজপরিবার ।। দেবাশিস ভট্টাচার্য
Debasish Bhattacharjee ।। দেবাশিস ভট্টাচার্য

মেদিনীপুরের ইতিহাসে সর্বপ্রথম ইংরেজ শাসন বিরোধী সাহসিকতা ও দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছিলেন নাড়াজোলের সীতারাম খান ও রানী শিরোমণী। কিন্তু ১৭৮৮ সালের পর ১৮৯৫ পর্যন্ত নাড়াজোলের জমিদাররা প্রত্যক্ষভাবে ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধাচারণ করেনি। কারণ তাঁরা বুঝেছিলেন এতবড়ো জমিদারির সুরক্ষায় ইংরেজদের সঙ্গে সরাসরি শত্রুতামূলক…

Aug 13, 2022
Card image




স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা   দেখেছেন : 592

ঐতিহাসিক ফাঁসিডাঙা ।। পুলক রায়
Pulak Roy ।। পুলক রায়

  চন্দ্রকোণা শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে পিচঢালা রাস্তার পাশে বিশাল জমি একসময় বনজঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। চারপাশে বট আর পাকুড়ের গাছ। এখানেই বড় বড় গাছে স্বাধীনতা সংগ্রামের বহু নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি যেমন হাবল ,সুবল, রাজেন্দ্র, ফাগু, যুগল ও কিশোর সহ দেশভক্ত বহু…

Jul 31, 2022
Card image




স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা   দেখেছেন : 633

ঘাটাল মহকুমার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ ।। অশোক পাল
Ashok Pal ।। অশোক পাল

অরবিন্দ মাইতি স্বাধীনতা সংগ্রামী অরবিন্দ মাইতির জন্ম দাসপুরের গোছাতি গ্রামে। তিনি ১৯২০ খ্রি. দাসপুর থানা কংগ্রেস কমিটির সম্পাদক হন। ১৯৩০ খ্রি. গান্ধীজীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে লবণ সত্যাগ্রহ ও মাদক দ্রব্য বয়কট আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মে মাসে লবণ তৈরী কেন্দ্র থেকে অরবিন্দ…

Aug 6, 2022
Card image




স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা   দেখেছেন : 770

স্বাধীনতা আন্দোলনে চন্দ্রকোণা : ১৯০৫-১৯৪২ খ্রী : ।। গণেশ দাস
Ganesh Das ।। গণেশ দাস

বণিকের 'মানদণ্ড', 'রাজদণ্ডে' রূপান্তরিত হওয়ার পর থেকেই ইংরেজ শাসকের অনৈতিক শাসন, অত্যাচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে দিকে দিকে বাঙালি তথা ভারতবাসী গর্জে উঠেছিল। কখনো নিয়মতান্ত্রিক পথে, কখনো সশস্ত্র সংগ্রামের পথ অবলম্বন করে বুঝিয়ে দিয়েছিল এ মাটি খুব শক্ত মাটি, স্বাধীন মাটি। এখানে…

Aug 13, 2022
Card image




স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা   দেখেছেন : 743

লবণ আইন অমান্য আন্দোলনে দাসপুরের শ্যামগঞ্জ ।। বঙ্কিম দে
Bankim Dey ।। বঙ্কিম দে

  নবাব মীরকাসিম ও ইংরেজ শাসক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সন্ধির শর্ত হিসেবে পাশাপাশি দুটি চাকলা, চাকলা বর্ধমান ও চাকলা মেদিনীপুর কোম্পানির হস্তগত হয়। পরবর্তী চাকলা হিজলির তমলুক ও চেতুয়া পরগনার ভৌগোলিক ও আর্থসামাজিক সাদৃশ্য তে প্রচুর মিল ছিল। পরগনা গুলি নদী…

Aug 13, 2022
Card image




স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা   দেখেছেন : 3484

স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা ।। উমাশঙ্কর নিয়োগী
Umasankar Neogi ।। উমাশংকর নিয়োগী

                                    অগ্নিযুগে বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষিত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রিয় বিচরণ ভূমি ছিল মেদিনীপুর জেলা। খ্যাত-অখ্যাত বহু বীর শহীদের জন্ম দিয়েছে  মেদিনীপুর। এই জেলা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। হঠাৎ করে মেদিনীপুর জেলার মানুষ দেশপ্রেমিক, স্বাধীনতাকামী  হয়ে ওঠেনি-  এ তার উত্তরাধিকার সূত্রে…

Aug 10, 2022
Card image




স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা   দেখেছেন : 710

কুখ্যাত ডগলাসের হত্যাকারী মহান বিপ্লবী প্রভাংশুশেখর পাল ।। নিখিলেশ ঘোষ
Nikhilesh Ghosh ।। নিখিলেশ ঘোষ

প্রদ্যোৎ কুমার ভট্টাচার্যের অভিন্ন হৃদয় বন্ধু প্রভাংশুশেখর পাল ছিলেন একজন দৃঢ়চেতা বিপ্লবী। জীবন মৃত্যুকে সত্যিই পায়ের ভৃত্য করে যিনি মাত্র ৪ ফুট দূরত্বে দাঁড়িয়ে ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেটকে গুলিবিদ্ধ করার স্পর্ধা দেখিয়েছিলেন। যেখানে ধরা পড়ার অর্থ নিশ্চিত মৃত্যু তা জেনেই তিনি অগ্রসর…

Aug 13, 2022
Card image




স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা   দেখেছেন : 1405

অগ্নিযুগের মহান বিপ্লবী শহীদ প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য ।। নিখিলেশ ঘোষ
Nikhilesh Ghosh ।। নিখিলেশ ঘোষ

"We are determined Mr burge not to allow any European to remain at Midnapore .yours is the next turn .Get yourself ready. I am not afraid of death .Each drop of my blood will give birth to hundreds of Pradyots…

Aug 5, 2022
আরও পড়ুন
«
  • 1
  • 2
  • 3
»

স্বাধীনতা সংগ্রামে ঘাটাল মহকুমা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...