
মন কেমন করে ওঠে
দুঃখানন্দ মণ্ডল
মানুষ সম্পূর্ণ ভাবে নিজেকে নিজের কাছে পেয়ে গেলে ঘুরে দাঁড়ায় অতীত থেকে। কিন্তু একটা সময় আসে অতীত খুব নাড়া দেয় স্মৃতি। তখন ক্লাস ফাইভ। বাড়ি থেকে ছয় মাইল দূরে স্কুল। হাঁটা পথ প্রায় তিন ঘন্টার। টিফিন বলতে রাতের ভাত আর অড়রহর ডাল সিদ্ধ। এক হাতে বইয়ের ব্যাগ, অন্য হাতে বাসি ভাতডালের সিলভার টিফিনকেরী। এত পথ তারপর কাঁসাই নদী পার হওয়া। মাঝির সাথে চুক্তি থাকত বছরে তিনটি মুরগী। সমতল বালির চরে অনেকটা গর্ত খোলা হতো ভিজে বালি তারপর জল আসা বালির উপর বাসি ভাতডালের কৌটাটি বসিয়ে দিয়ে বালি চাপা দিয়ে স্কুলের পথে এগিয়ে যাওয়া। সাত পিরিওডের ঘন্টা বাজার অপেক্ষায় থাকত পেট। তারপরেও শান্তি কোথায়? এক ঘন্টার হাঁটা পথ পেরিয়ে আসার পর নদীর চর। যত সামনে আসতো নদীর চর ততই গতি বাড়তো পায়ের। একটা সময় বালি সরিয়ে কৌটা বার করা হতো। ততক্ষণে কৌটাটি বেশ ঠাণ্ডা হয়েছে। ভাতের টক স্বাদও এসে গেছে। তৃপ্তি ভরে খাওয়ার পর কাকচক্ষু কাঁসাইয়ের জল কৌটার ঢাকনা দিয়ে খেয়ে নৌকায় করে নদী পার হয়ে বাড়ির পথে এগিয়ে যাওয়া। মন কেমন করে ওঠে স্মৃতি নাড়া দিলে। এখন নৌকা বাঁধা নেই। নেই মাঝিও। বালির চরে কাশের বন মাথা নাড়ছে আর নদীর উপর দৈত্যের মতো দাঁড়িয়ে আছে কংক্রিটের ব্রিজ। দাদা আসুন ভাত বাড়া হয়ে গেছে। তোমার প্রিয় অড়রহর ডাল আর শুসনি শাকের ভাজা আজ করেছি।
স্মৃতিগুলো জমে আছে ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির মতো, বার্ধক্য যত এগিয়ে আসছে ততই মন কেমন করে উঠছে।