নবাবের মহলের বাইরে নদীতীরের বটতলায় এসেছেন এক দরবেশ ফকির |দলে দলে প্রজারা চলেছে আশীর্বাদ নিতে |তিনি একে একে সবাইকে আশীর্বাদ করছেন এবং যে যেমন প্রশ্ন করছে, তিনি তাকে তেমন উত্তর দিচ্ছেন |তাঁর উত্তর শুনে সকলের মনের অন্ধকার কেটে গিয়ে ফুটে উঠেছে এক আশ্চর্য আলো, যার কোন তুলনাই হয় না|
কথাটা নবাবের এক সৈনিকের কানে গেল| ফকিরের আশির্বাদ গ্রহণের তার কোন বাসনাই ছিল না| তার মনে বহুদিন থেকে একটি প্রশ্ন উঁকি মারে: জাহান্নাম ও জান্নাত বলে সত্যিই কি কোন বস্তু আছে? নাকি সবই অলীক কল্পনা? মাঝে মাঝে এই প্রশ্ন বড় উদভ্রান্ত করে তুলে তাকে| তাই তার বাসনা হল প্রশ্নটি নিয়ে ফকিরের কাছে যেতে| দেখা যাক, ফকিরের কাছ থেকে তার কোনো সদুত্তর পাওয়া যায় কিনা এই প্রশ্নের ওপর|
সেইমতো সে ফকিরের পাদবন্দনা করে দাঁড়ালো তাঁর সামনে |
ফকির, জাহান্নাম বা জান্নাত বলে সত্যিই কি কিছু আছে বলে আপনি মনে করেন?
ফকির তার মুখের দিকে তাকালেন, জানতে চাইলেন তার পরিচয়|
তুমি কে?
আমি নবাবের সৈনিক|
ফকির তার গর্বিত উত্তরে মনে-মনে হাসলেন, বিদ্রুপ পূর্ণ কণ্ঠে বললেন" কী রকম নবাবের সৈনিক তুমি! তোমাকে দেখে তো ভিখিরি মনে হয়!"
ভিখিরি! নবাবের সৈনিক কে ফকির ভিখিরি বলায় সে চটে লাল | ক্রোধে জ্বলে উঠলো তার আপাদমস্তক| ফকিরের এত বড় সাহস, তাকে বলে কিনা ভিখিরি!
কাল বিলম্ব না করে সে সরোষে তার তলোয়ার খানা খাপ থেকে বের করে ফকিরের শিরশ্ছেদের জন্য এগিয়ে গেল! ফকির হা হা করে হেসে উঠলেন|
বললেন, জাহান্নাম আছে কিনা তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে না? এই হল জাহান্নাম| এবার তুমি জাহান্নামে এসেছো|
কথাটা শুনে তার কৃতকর্মের জন্য লজ্জা পেয়ে যায় ওই সৈনিকটি| সে থতমত খেয়ে তরবারিটি খাপে ভরে ফেলে|
ফকিরের অট্টহাসি ও থামলো | গম্ভীর মুখে তিনি বললেন, " এই হল জান্নাত, বুঝলে সৈনিক? এবার তুমি জান্নাতে পৌঁছে গেলে|"