মন কেমনের কাব্য ।। সুদীপ্ত চক্রবর্তী
Unpublished
-
Sudipta Chakraborty ।। সুদীপ্ত চক্রবর্তী
-
Read Time: 1 min
-
Hits: 553
মন কেমনের কাব্য
সুদীপ্ত চক্রবর্তী
সে দিন খুব জোরে হাওয়া বইছিল, ঝড়ের মতো…… বৃষ্টি ও ঝর ছিল একনাগাড়ে |
আমরা তখন ক্লাসরুমে, মেয়েদের আর ছেলেদের বেঞ্চ আলাদা | আমি ছেলেদের ফিফথ্
বেঞ্চের
মেয়েদের দিকটায়, আর শ্রীতমা মেয়েদের টায় ওই একইভাবে |
ক্লাস চলছে, ফিজিক্স স্যার কল্যাণ বাবু শব্দের কম্পাঙ্ক বোঝচ্ছেন,
হটাৎ শ্রীতমা-র
ফিসফিস্ আওয়াজ,”ক্লাসের পর একটু দাঁড়াস, কথা আছে |” আমার মতো একটা আকাট
এর সাথে কারোর যে কোনো কথা থাকতে পারে বিশ্বাসই হোলোনা…তাই বেয়াক্কেলের মতো বলে
দিলাম, আমার খেলা আছে; কিন্তু শ্রীতমা এমনভাবে তাকালো, সে দৃষ্টি আমার
একেবারেই
অপরিচিত, অগত্যা দাঁড়াতেই হোলো | ক্লাসের পর একটা মোড়া কাগজ আমার হাতে দিয়ে
বললো,” বাড়িতে গিয়ে দেখিস”, আমি তখনই দেখতে যাচ্ছিলাম.. শ্রীতমা হাতটা চেপে
ধরে বললো,”প্লিজ….” | জীবনে প্রথমবার ভীন নারীর ছোঁয়া, কিছুক্ষন আগেই জানা
শব্দের কম্পাঙ্কের বাস্তব অনুভূতি বুকের ভেতর টের পাচ্ছিলাম .. কে যেন বুকের
মাঝখানটায়
হাতুড়ি পিঠছে …. শ্রীতমার হাতে যেন বিদ্যুৎ ছিল আর আমিই ছিলাম তড়িতাহত হবার
জন্য |
সত্যি বলছি সে চিঠি আজো আমি পড়তে পারিনি, আর তাই হয়তো আজো এভাবে
এমন………
পরের দিন আবার স্কুল, গেটের ঠিক মুখেই শ্রীতমা, ওর দৃষ্টি কেমন যেন..কতকালের
না ঘুমোনো
চোখ..ও আমায় কিছু বলতে চাইছিল..আমি না দেখার ভান করে এড়িয়ে গেলাম | এরপরও
অনেকদিন, অনেক বছর একইভাবে কেটেছে, আমি শ্রীতমাকে কিছু বলতে পারিনি, বলতে
পারিনি ওর আঙুল থেকে বিদ্যুৎ বেরিয়ে আমার বুকে নদী হয়ে গ্যাছে | বলতে গেলেই
দেখেছি,
বুকের ভেতর সেই কম্পাঙ্ক বাড়তে বাড়তে অনেক, ভয় হোতো … কিসের ভয় জানিনা |
সেদিন বাড়ি ফেরার পথে, খুব ঝড় বৃষ্টি হচ্ছিল, একটা দোকানের ছায়ায়
শ্রীতমা
দাঁড়িয়ে, চোখে মুখে অনেক কালের না মোছা ক্লান্তি | আমি বিশ্ময়ে তাকিয়ে ছিলাম
শুধু….আর
সেই ঘোর ভাঙিয়ে ও-ই প্রশ্ন করল,” কি রে কিছু বলবি না আর্য?”… আমি বোকার মতো
প্রশ্ন করলাম তুই এখানে এভাবে? ও বললো,”কেন আসতে নেই বুঝি?”… আমি আর কিছু
বললাম না | ও আবার বললো,”আর আমাকে দেখতে হবেনা তোকে…..আমি তোর থেকে
অনেক দূরে চলে যাচ্ছি আর্য.. ” | আমি আবার বোকার মতো প্রশ্ন করলাম, “কেন?”….
কিন্তু যা উত্তর পেলাম আমি প্রস্তুত ছিলাম না, আমার পায়ের নীচের সব মাটি যেন
একটানে
কেউ সরিয়ে নিয়েছে | আমার গলার কাছে কথা এসেও যেন হারিয়ে যাচ্ছে কোথাও…… আমার
চোখ শুধু শ্রীতমার হাতের আঙুলগুলো খুঁজছিল, আমি বেশ দেখতে পাচ্ছিলাম শ্রীতমার
সব আঙুলগুলো
যেন একএকটা নদী, কোপাই, ইছামতি……মিসিসিপি….রাইন সব… ইচ্ছে করছিল ডুবে যাই
সে নদীতে…..কিন্তু তলিয়ে যাচ্ছিলাম চোরাবালিতে শুধু…………
শ্রীতমা ফিরে যচ্ছিল আর কিছু না বলেই, আর আমি বোকার মতো
দাঁড়িয়ে দেখছিলাম
সেই নরম আলোয় স্বপ্নের মিলিয়ে যাওয়া….কোনো নিতলনীল মোহোনায়….হয়তো সম্পুর্নই
মিলিয়ে যাবে…হটাৎ বুকের সব কম্পাঙ্ককে ছিপিয়ে আমি চিৎকার করে উঠেছিলাম,
”শ্রীতমা আমি ডুবতে চাই…….”| মিসিসিপি..কোপাই…রাইন সব সব নদীতে সে দিন
বোধহয় এক সাথে জোয়ার এসেছিল……………………