শ্রেষ্ঠ উপহার ।। সুমিত দেবনাথ

Unpublished

শ্রেষ্ঠ উপহার
সুমিত দেবনাথ


"মা...মা... ও মা আমার সেইবারের পুজোর জামা আর জিন্সের প্যান্টখানা বের করো
তো, তাড়াতাড়ি করো। বিট্টুর আজ জন্মদিন!!
ওর এই আজকেই পনেরো বছর হল! জান মা!
তাহলে আমার কত হলো গো? ওহ.. মনে পরেছে , আমার হল পনেরো বছর দুই মাস । তাই না?"
এতসব কথা বলতে বলতে আকাশ বাথরুমে ঢুকল। এই মূহুর্তেই কাকলীর স্বামী মানে
বিট্টুর বাবা রমেশ ফিরলেন রিক্সা চালিয়ে। আজকাল আর রিক্সায় কেউ চড়ে না। টোটো
বেরিয়ে সব রিক্সা- গুলোর বাজার কেঁড়েছে। স্টেশনপট্টীর সব রিক্সাভাইরা টোটো
কিনল। কিন্তু টাকার অভাবে রমেশের আর হরির টোটো কেনা হয়নি। আর এই একবছর ধরে
সংসার তাদের প্রায় চলে না বললেই হয়। তার‌ উপরে ছেলে এবার মাধ্যমিক দেবে! ছেলের
পড়া বন্ধ করার‌ই প্রয়োজন হয়ে গেছিল। যদি  না কাকলীর করুণ অনুরোধে স্কুলের
শিক্ষকরা ওকে বিনিপয়সায় না পড়াত। এইভাবেই চলছে। জানে না আর কদ্দিন এভাবেই
রাখবে ঈশ্বর। টাকার পুঁটলিটা বেড়ায় ঝুলিয়ে বলে-" কীগো আজ তো বিট্টুবাবার
জন্মদিন। আসার সময় দেখলাম কত তোরজোর। আমাদের বলেছে নাকি?  আজ অনেকদিন পরে
পেটটা ভরে খাব বলো!! " একধমক দিয়ে কাকলী বলে উঠল-"হ্যাঁ খাব খাব ? তো,খাবে তো
বিট্টুবাপকে উপহারটা দেবে কি? নাকি কিছু না দিয়েই ভিখারির মতো খেয়ে আসব? এর
উপরে আবার মনা ধরেছে বায়না ওর সেই বছরের পুজোর জামা-প্যান্ট বার করতে হবে। ও
বাড়ি যাবে জন্মমদিনে।আর ঐসব এখন ওর হবে নাকি? কত ছোটো হয়ে গেছে দুবছরে। আর
তাছাড়াও এবার বড়ো গিন্নী আমাদেরকে বলেন নায়। ছোটোর ঘরে আসল। আর আমার কাছে তো
এল না? " একটু হতাশ হয়ে রমেশ বলে উঠল-" বলে নায়! ওহ! বুঝেছি আসলে এখন তো
আমাদের আর টাকা নাই। ভেবেছে হয়তো কিছু না দিয়েই পাঁতপেরে খেয়ে যাব। তাই হয়তো..
আসলে মানুষের পরিচয় তার টাকাতেই হয়।। এখন আমাদের কাছে টাকা নাই, তাই আমরা
মানুষ‌ও ন‌ই। নাহা.. মনাকে যেতে হবে না ওখানে। " এদিকে আকাশ আসে না বলে বিট্টু
তো কেক কাটছে না । বাবা-মা সবাই ,দেরি হচ্ছে দেখে বিট্টুকে জোর করছে কেক কাটার
জন্য। কিন্তু আকাশকে ছাড়া কাটবে না। আকাশ যে ওর জীবনের সবচেয়ে বড়ো বন্ধু। আর
তাছাড়া কাকু-কাকিমাও আসেনি। কাকিমার হাতের তৈরি নলীনগুরের পায়েস ও তো প্রত্যেক
জন্মদিনেই খায়। কিন্তু এবার না আসতে দেখে ও ছাদ থেকে নেমে দৌঁড়ে চলে যায়
আকাশদের বাড়ি। " কি রে আকাশ তুই এখোনো এখানে বসে । কাকু-কাকিমা চলো। চল আকাশ।
ও কাকিমা আমার পায়েস কোথায়? গতবার বলেছিলে এবার কাজু দিয়ে আমার জন্যে পায়েস
করবে।আমার সব মনে আছে কিন্তু। ক‌ই দাও দেখি। তাড়াতাড়ি দাও। আমার কিন্তু জিভে
জশ চলে আসছে। আরে কি হল??"


 "বাপ তুই পায়েস খাবি কিন্তু. ." আর কিছু বলতে পারেনি । হাউ হাউ করে কেঁদে উঠল
কাকলী । " "কী হল কাকিমা কাঁদছ কেন? বুঝেছি কাজু দেওনি। আচ্ছা ঠিক আছে যা করেছ
তাই দাও। দাঁড়াও আমিই নিয়ে নিচ্ছি। এই তো পেয়েছি। আহা: কী স্বাদ। কী সুগন্ধ!
খুব ভালো। খুব ভালো। কতদিন এরকম খাইনা। আর মায়ের হাতের তেল-ঝালের ঝোল খেতে
খেতে মুখ একদম পঁচে গেছে। খুব স্বাদ খেলাম। নাও এখন চলো তো" এই বলে আকাশ আর
কাকু-কাকিমাকে টানতে টানতে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে গেল বিট্টু। হঠাৎ কাকলি বলল-"
কিন্তু বাবা? ওটাতো!" চুপ করো তো। " " নে আকাশ, কাকিমা-কাকু কেক খাও।" এই দেখে
তেলে-বেগুনে জ্বলছে মা এসে বলল- এলে তো জন্মদিনে । বিট্টুর জন্য গিফ্ট কোথায় ?
এনেছ? নাকি.." এই বলতে বলতেই বিট্টু মাকে থামিয়ে বলে- কাকিমা আমাকে যা উপহাযর
দিয়েছে তা তুমিও কোনোদিন দেওনি। কাকিমা আমাকে আকাশের মতো পরম প্রিয় বন্ধু আর
জন্মদিনের পায়েস খায়িয়ে পরম তৃপ্তি দিয়েছে। এটাই তো আমার সব জন্মদিনের শ্রেষ্ঠ
উপহার।

একক কবিতা সন্ধ্যা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...