logo corona

‘‘জীবন কাটালেন কী রকম?’’–‘‘ভালো’’ ।। আশিস মিশ্র
swadhinota 
" জীবন কাটালেন কী রকম "
" ভালো "
" আপনার কোনো শত্রু ছিল? "
" তারা আমাকে সৃষ্টিকাজ থেকে সরাতে পারে নি। "
" আর খ্যাতি?"
" কাজকে করে দিয়েছে কর্তব্য।"
" আর আপনার বন্ধুরা? "
" আমার কাছ থেকে চেয়েছে আরো কাজ।"
" আর নারীরা?"
" আমার কাজ শিখিয়েছে তাদের প্রশস্তি।"
এই কটি প্রশ্ন ও তার উত্তর সম্পর্কে আমাদের কৌতূহল বাড়িয়েছে। বিশেষ করে উত্তর ও উত্তরদাতা সম্পর্কে।  ১৯৮৮ সালে বইমেলা থেকে একটি ছোট বই কিনেছিলাম। বইটির নাম ‘রোদ্যাঁ।’ লেখক পূর্ণেন্দু পত্রী। বইটি পড়ার পর আমার মনের বদ্ধ আকাশটি মুক্ত হয়ে গেল।  যেহেতু আমি একজন স্বাধীন পুরুষ, তাই আমার শিল্প -সত্তাটিও স্বাধীন। কিন্তু সেখানে কখন যে বাসা বেঁধেছিল একটি স্বাদহীন প্রবাহ,  যা কিছুতেই সরাতে পারছিলাম না৷ বইটি পাঠ করে আমার স্বাদহীন জীবনের কিছুটা হলেও স্বাদ ফিরে এলো। উত্তর ও উত্তরদাতা ভাস্কর রোদ্যাঁর জীবনের সামান্য কিছু জানলাম। 
সে বড়ো কম লড়াই নয়। সামাজিক ভাবে মগজে চেপে বসে থাকা এত দিনের শিল্পচেতনাকে একের পর এক ধাক্কা দিয়ে যে সব সৃষ্টি হয়েছিল, তা যে চিরকালীন। নতজানু হয়ে দাঁড়াতে হয় সেই সৃষ্টির কাছে। সেই চিন্তাবিদ। যা আমাদের ভেতরে বাস করে আছে। অথচ তাকে আমরা চিনতে পারিনি। ফলে এই মুক্ত বিহঙ্গের মতো ডানা মেলা জীবনও একসময় স্বাদহীন হয়ে পড়ে কখন -- জানতেও পারি না। একটি মহৎ কবিতা লেখা হয়ে যাওয়ার পর কবি যেমন আনন্দে বিভোর হন, তেমনি একটি মহৎ শিল্পসৃষ্টির পরও একজন শিল্পী আনন্দে বিভোর হন। সামাজিক শত্রুরা তাকে কখনো কখনো অস্বীকার করে। কিন্তু তা ক্ষণকাল। চিরকালীন দর্শনকে কখনো নস্যাৎ করা যায় না। আর সেই চিরকালীনতার জন্যই একরকমের স্বাধীনতার লড়াই লড়তে হয় স্রষ্টাকে। যে লড়াই লড়েছেন রবীন্দ্রনাথ থেকে বালজাক। দান্তে থেকে বোদলেয়ার। নেরুদা থেকে নজরুল।  মধুসূদন থেকে জীবনানন্দ। এলিয়ট থেকে মালার্মে। 
ভারতচন্দ্র, মধুসূদন থেকে রবীন্দ্রনাথ -- এই দীর্ঘ সময়ের পরম্পরায় দাঁড়িয়ে দেখুন--কতকিছু দেখতে পাবেন। জীবনের চরম আনন্দের খোঁজে জীবন তো স্বাদহীন হয়ে দাঁড়িয়েছিল মধুকবির। তবু তো থেমে থাকেনি ‘মেঘনাদ বধ’ কাব্য। নোবেল প্রাপ্তির প্রেক্ষাপট ও তারপরের ঘটনায় রবীন্দ্রনাথের জীবনকে স্বাদহীন করে তোলেনি? ভুলে যাইনি আমরা ‘মুক্তি ওরে মুক্তি কোথায় পাবি...’।
আমাদের সমাজ বারেবারে শিল্পীকে তার মুক্তমনে কাজ করতে দেয়নি। একের পর এক শিল্পী - সাহিত্যিক, কবিকে রাজনৈতিক মাতব্বরদের রক্তচক্ষুর মুখে পড়তে হয়েছে। তবুও থেমে যায়নি সুভাষ মুখোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব বসুদের কলম।  বন্ধ হয়ে যায়নি সলঝেনিতসিনের কলম। যে বাংলাভাষার জন্য একটা রাষ্ট্র স্বাধীনতার আন্দোলনে ঝাঁপিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে, সেই মানুষটিকে হত্যা করা হয়েছিল। তবুও বাংলাভাষা থেকে স্বাদহীন হয়ে পড়েনি আজও বাংলাদেশ। 
বিশ্বভারতীর জন্য এতো কিছু করেও তো রথীন্দ্রনাথকে উপেক্ষিত হতে হয়েছিলো। এতো কিছু করেও সারাজীবন যন্ত্রণাকাতর ছিলেন ভ্যানগঘ থেকে রামকিঙ্কর।  কেন? এই প্রশ্ন স্বভাবিক ভাবেই আসে।  তার মানে এখনো সেই সংকীর্ণতার মৃত্যু হয়নি।  যে এগোচ্ছে মুক্ত চিন্তা নিয়ে, তাকে টেনে ধরো। থামিয়ে দাও। নামিয়ে দাও আরো নীচে। 
তবুও নামানো যায়নি।  মহিনের ঘোড়াগুলি  আজও টগবগিয়ে দৌড়চ্ছে। আরও দৌড়বে। মনে রাখতে হবে -- সংকট থাকবে, সৃষ্টি হবে স্বাধীন,  তার ডানা হবে মুক্ত।  
যেমন আলবেয়ার কামু মনে করতেন-- অর্থনৈতিক বিপ্লবকে স্বাধীন হতে হবে; স্বাধীনতার তত্ত্বেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে অর্থনীতিকে। এবং তিনি বৌদ্ধিক ও কায়িক শ্রমের মধ্যে কোনো বিভাজন মানতেন না।  তিনি মনে করতেন -- সংস্কৃতিকে কখনোই শ্রম থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। ঠিক যেমন স্বাধীনতাকে বিযুক্ত করা যায় না ন্যায়বিচারের আদর্শ থেকে। 
আর আজকে আমরা কী দেখছি, ন্যায়বিচারের আদর্শের বিচ্যুতি। তাই তো স্বাদহীন হয়ে পড়ছে ন্যায়, অন্যায় হয়েছে আরও স্বাধীন।  ফলে বেপরোয়া দুর্নীতির ফলে আর্থসামাজিক কাঠামো যখন দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে, তখন আমাদের জিহ্বার স্বাদকোরকের অসাড়তা আসবে, তা তো স্বভাবিক। 
তাই রোদ্যাঁর মতো উত্তর দিই-- ‘জীবন কাটালেন কী রকম’---‘ভালো’।
 
 
 

একক কবিতা সন্ধ্যা



সহজ কবিতা সহজ নয় কঠিনও নয়



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...