procchod heontor mohool

আমাদের রবীন্দ্রনাথ ।। সোমনাথ শর্মা

 tham heontor mohool Copy

রবীন্দ্রনাথ। এই ভদ্রলোক সম্পর্কে আমাকে লিখতে হবে! কঠিন কাজ। ও কাজ আমি করব না। আমি যাদের চিনি তাদের নিয়ে লিখব। রবীন্দ্রনাথকে আমরা কত ভালোবাসি তার সপ্রমাণ ব্যাখ্যায় যাব খানিকটা।

একজন লেখক বা যে কোনো পেশার সৎ লোক মনীষী হয়ে ওঠেন তাঁর চিন্তা –মেধা –প্রজ্ঞা দিয়ে। এখন মনীষী হয়ে উঠলেন, উঠে ঝামেলা বাড়ালেন আমাদের জীবনে! গাদা গাদা গান লিখলেন- সে সবের বেশ কিছু শেষ দশ বছর ট্র্যাফিকে বাজছে, যাদের জন্যে বাজানো- সেই সো কল্ড জন(অ)সাধারণের জন্যই বাজারে কম পয়সায় রবীন্দ্ররচনাবলী সুলভ। পয়সাও লাগে না- পাবজি খেলার ফাঁকে রবীন্দ্রনাথ যা যা লিখেছেন , এমনকি যা লেখেননি- সবের পিডিএফ পাওয়া যায় বিনে পয়সায়! কথা হচ্ছে এত সব পড়বে কে- মহাপুরুষের চারুপ্রকাশ ঘোষের মত বলতে হয় ! পড়বেই না কেন ! বাংলাবাজারে- (হ্যাঁ এই বাংলাবাজার হিন্দমোটর থেকে ইংলিশবাজার অবধি বিস্তৃত) এন্তার এন্টারটেনমেন্টের ঢেউ দীঘার সমুদ্রকে দু ঘা দিয়ে হারিয়ে দেয়।

এই যে পড়ার অনীহা, বিবেচনাবোধ থাকা মানুষমাত্রেই জানেন, এটা জায়েজ।

একজন লোক বলছেন, “আমাদের দেশে কলার পাতায় খাওয়া তো কোনদিন লজ্জাকর ছিল না, একলা খাওয়াই লজ্জাকর ।” তাঁর লেখা পড়লে ধর্মহানির আশঙ্কা ! আমরা চিরটাকাল একলা খাবো একলা খাবো ( এমনি তোলার টাকাও) একলা খাবো রে করে এলেম নতুন দেশে---  রবীন্দ্রনাথের লেখা পড়ে কি জাতিচ্যুত হব !
রবীন্দ্রনাথ আরেক জায়গায় বলছেন ,জুয়াখেলার  যেমন  মোহ আমাদের অনেক দেশে মামলা মোকদ্দমার প্রতিও সেই মোহ দেখা যায় ।

এটার অদ্ভুত ভালো জাস্টিফিকেশান পাওয়া যায়  তপন রায়চৌধুরির রোমন্থন অথবা ভীমরতিপ্রাপ্তের পরচরিতচর্চা –বইতে। অননুকরণীয় ভাষায় অধ্যাপক রায়চৌধুরি বলছেন ওঁদের বরিশালে গ্রাম্য লোকেদের উদবৃত্ত টাকা হলে একজন অন্যের সঙ্গে পরামর্শ করত—কী করা যায় বল দেখি, আরেকটা বিয়ে করি , না কাকার সঙ্গে আরেকটা মামলা লড়ি। এখন এঁদের বংশধরেরা যারা সেই টাকা পয়সা বজায় রেখেছে বাংলায় হলে বছরে একবার করে কবিতার বই ছাপায় নিজের টাকায়, অন্য  রাজ্যে হলে ঘোড়া কেনাবেচা করে ।
রবীন্দ্রনাথ সাধারণ মানুষের কাছে at all জরুরী নন বলে আমি মনে করি।
রবীন্দ্র রুচির সঙ্গে সাধারণ মানুষের  রুচি ,গণরুচি যাকে বলে- তা মেলে না ঘটনাচক্রে। আর সেটা সমাজের একেবারে ওপরতলার লোক থেকে একেবারে খেটেখাওয়া লোক অবধি সবক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য ।

রবীন্দ্রনাথ বলছেন, সাম্যের দরবার করিবার পূর্বে সাম্যের চেষ্টা করাই মনুষ্যমাত্রের কর্তব্য। তাহার অন্যথা করা কাপুরুষতা  ।
এটাই তো বেসিক জায়গা- আমার বাড়ির ড্রেনে আমি ছাড়া সবার নোংরা করা নিষেধ, এ মন নিয়ে  আমরা সাম্যের আশা করি।
রবীন্দ্রনাথের  দৃষ্টান্ত দিই , নারীর মনুষ্যত্ব নামের একটা লেখায় রবীন্দ্রনাথ বলছেন, আমাদের একমাত্র অবাধ অধিকারের ক্ষেত্র আমাদের স্ত্রী। সেখানে আমাদের যোগ্যতার কোনো নিশানা দাখিল করতে হয় না ।

অথচ দেখা যায়, আমাদের বাড়ির মেয়েরা সুখী মানুষের ভাব করে থেকে যায়—ছোট থেকে সংসারে না বুঝে বাবার, পরে বুঝেও সামান্য সুবিধেবাদিতার বিরোধিতা করতেও দ্বিধা হয়। অথচ যত বিপ্লব ফেসবুকে “মেয়েবেলা” কবিতা-গদ্য লিখে! কেন মেয়েবেলা ! তসলিমা নাসরিন বলে দিয়েছেন বলে! ছেলেবেলা একটা টার্ম , সেটা উচ্ছেদ করে শুধু মেয়েবেলা লিখেই নিজের মেয়েসত্তা প্রকাশিত হলে আর রিভোল্ট করার দরকার কী ! সেটাই তো একেবারে সোজা উপায়। চোখ কান বুঝে ক্রিজ থেকে এগিয়ে গেলাম। বলের লাইন দেখলাম না। পেছনে উইকেটকিপার বলটা ছুঁয়ে দিল ,আউট ।  নায়কের সৌম্যেন বসুর মতো উত্তমকুমারের পিঠ চাপড়ে বলার মতো বলতে হয়, ফিনিস ফর অল দ্য টাইম –বুঝলি!

রবীন্দ্রনাথ কেন তাঁর আগে জন্মানো কারো কথাই বাঙালি শোনেনি। বাঙালি কি বিদ্যাসাগরের কথা শুনেছে  উল্টে এই বাঙালি বিদ্যাসাগরকে মারার জন্য লোক লাগিয়েছে , রামমোহন রায়ের কথা ! ফলে শিল্প সাহিত্য যতই টেকনিক্যালি উন্মুক্ত হোক- একটা শ্রেণীর
কুক্ষিগত বিষয়। তারমধ্যে থেকে সমাজের একেবারে প্রান্তিক ছেলে বা মেয়েটা যে রবীন্দ্রনাথ পড়বে, ওপর তলা তাকে সুযোগ দেবে না! সমাজে মার্জিনালাইজডকে মার্জিনালাইজড না রাখতে পারলে এক শ্রেণীর বিপ্লব সাধন হবে না! এ অনেকটা পরিযায়ী আত্মীয়ের মতো। একজন আত্মীয় ধরা যাক কাজের সূত্রে আসে- কলকাতায়। তার প্রতিপত্তি অনেক। সে ফেরার পথে হাতে করে বাড়ির বেকার ছেলেটাকে ৫০০ টা টাকা করে দিয়ে যায়! তার এত প্রতিপত্তি সে যদি কান ধরে তাকে একটা দোকানে কাজে লাগিয়ে দিতে কি পারে না, পারে- দেবে না। না হলে দাতা- গ্রহীতার চেনটা নষ্ট হবে যে।

যে ছেলেটা সকালে বাবাকে চাষের জমিতে পান্তা ভাত আলুভাজা পৌঁছে দিয়ে এসে চান করে চার কিলোমিটার দূরে ইস্কুলে যায়—ফিরে মায়ের সঙ্গে ঠোঙ্গা বানায়। তার কাছ থেকে সোনারতরী শোনা পাপ! আর ইতিহাসের মূল সুতো এখানেই। তাই রবীন্দ্রনাথ, সবার না , কারো কারো।

লেখকের অন্যান্য লেখা

কবি প্রণাম : হে অন্তর



Card image




কবি প্রণাম : হে অন্তর   দেখেছেন : 3477

যার নাম রোদ ।। লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল
Laxmikanta Mandal ।। লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল

           'তবে পরানে ভালোবাসা কেন গো দিলে              রূপ না দিলে  যদি বিধি হে ' -  এ আক্ষেপ নিজের কাছেই । ভালোবাসা চাই  - ভালোবাসা চাই  - ভালোবাসতে চাই - ভালোবাসতে চাই , আজ চিৎকার করে বলতে হচ্ছে । …

May 7, 2020
Card image




কবি প্রণাম : হে অন্তর   দেখেছেন : 2131

বন্ধু, রহো রহো সাথে...।। পাপিয়া ভট্টাচার্য
Papia Bhattacharya ।। পাপিয়া ভট্টাচার্য

     মনে হচ্ছে অনন্তকাল ধরে এরকম স্থবির একটা সময়ের ভেতর আছি। দিন মাস সব গুলিয়ে গেছে, ঝিমিয়ে কাটছে সময়। রোজ ভাবি, আজ যেন কী বার!  কত তারিখ! কিছুতেই মনে আসে না  সহজে। তার মধ্যে এই একটা সপ্তাহ  যেন  একদম…

May 7, 2020
Card image




কবি প্রণাম : হে অন্তর   দেখেছেন : 2836

ব্যক্তিগত অন্তরকথন ।। অমিত মাহাত
Amit Mahata ।। অমিত মাহাত

    মা শালপাতা তুলে আনত বন থেকে। সেলাই করত। অন্যের বাড়িতে কখনও ধানসেদ্ধ চাল পাছড়ানো থেকে কাজে ভোজে ছোঁচগোবর সাফসুতরা। আমার তখন অতি অল্প বয়স। মা কাজে চলে যেত। সকালে। ফিরত সাঁঝে । আমার হাতে দেদার সময়। কীভাবে যে খরচা হত …

May 7, 2020
Card image




কবি প্রণাম : হে অন্তর   দেখেছেন : 3191

যে-অন্ধ বৃষ্টি আনতে যাচ্ছে ।। সুকান্ত সিংহ
Sukanta Sinha ।। সুকান্ত সিংহ

    আমার কিছু অনিবার্য বিষণ্ণতা ছিল। আমার কিছু অনিবার্য বিপন্নতা ছিল। আমার কিছু অনিবার্য আকুলতা ছিল। ছিল। আছে। থাকে। হ্যাঁ, আমার কিছু অনিবার্য আশ্রয়ও ছিল। সেই যে শিলাবতীতে নৌকো বাঁধা থাকত, আমি বাসের জানলা দিয়ে দেখতে পেতুম, তারা দুলছে জলের ঢেউয়ে…

May 7, 2020
Card image




কবি প্রণাম : হে অন্তর   দেখেছেন : 3827

ঘরের ডাক ।। কেশব মেট্যা
Keshab Metya ।। কেশব মেট‍্যা

  ‘পিসেমশায়! আমি কি ঐ উঠোনটাতেও যেতে পারব না?' –এই শব্দবন্ধ আজ  যেন বুকের মাঝে বারংবার ছ্যাঁৎ করে ছুঁয়ে যাচ্ছে । অমলের মতো কতো কোমলমুখের এখন এই একটাই আর্তি। দেওয়াল তোলা বর্গফুটের কারাগারে অসুখভয়ে বদ্ধ শৈশব। নির্ঘুম রাস্তার বুকেও শ্মশানের নিস্তব্ধতা।  নিজের…

May 7, 2020
Card image




কবি প্রণাম : হে অন্তর   দেখেছেন : 3332

‘চিরটাকাল সঙ্গে আছে জড়িয়ে লতা’ ।। প্রিয়াঙ্কা
Priyanka ।। প্রিয়াঙ্কা

      শব্দের অভাব বোধ হয়, সমুদ্রের বা আকাশের মতো অনন্তের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে। তাঁকে নিয়ে কিছু না লিখতে যাওয়া মানে ঠিক তাই। যাকে বাঙালীর বেশ বড় একটা অংশ একটা অলিখিত ব্যাকরণ বইএর ভেতর রেখে দিয়েছে।  স্বরলিপির অক্ষরের মধ্যে রেখে দিয়েছে। পাঞ্জাবী…

May 7, 2020
Card image




কবি প্রণাম : হে অন্তর   দেখেছেন : 1697

আমাদের রবীন্দ্রনাথ ।। সোমনাথ শর্মা
Somnath Sharma ।। সোমনাথ শর্মা

  রবীন্দ্রনাথ। এই ভদ্রলোক সম্পর্কে আমাকে লিখতে হবে! কঠিন কাজ। ও কাজ আমি করব না। আমি যাদের চিনি তাদের নিয়ে লিখব। রবীন্দ্রনাথকে আমরা কত ভালোবাসি তার সপ্রমাণ ব্যাখ্যায় যাব খানিকটা। একজন লেখক বা যে কোনো পেশার সৎ লোক মনীষী হয়ে ওঠেন তাঁর…

May 7, 2020
Card image




কবি প্রণাম : হে অন্তর   দেখেছেন : 1672

‘চিরসখা, ছেড়ো না মোরে..’ ।। আনন্দরূপ নায়েক
Anandrup Nayek।। আনন্দরূপ নায়েক

    পুরাতন বিকেল পেরিয়ে হলুদ ফুলে ভরা বাবলা গাছের সারি। চলে যাওয়া মাটির রাস্তাটি পায়ে পায়ে ঢুকে পড়ে প্রিয় বাড়িটির ভেতর। সাঁঝ নেমে আসে। দখিনের বায়ু বয়। মৃদু আলো জ্বলে ওঠে। এক একদিন বাবা তার হারমোনিয়াম নিয়ে বসে। গান গায় একের…

May 7, 2020
আরও পড়ুন

কবি প্রণাম : হে অন্তর- সংখ্যায় প্রকাশিত লেখা সমূহ



একক কবিতা সন্ধ্যা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...