iswarchandra vidyasagar

Mohool Potrika
Login Here  Login::Register

প্রেম ।। প্রিয়াঙ্কা

 

যদিও প্রেম নিয়ে লিখতে বসেছি, কিন্তু আমার আবার অপ্রেমের সঙ্গে একটা প্রেমের সম্পর্ক আছে। এমনি বদনাম। তাই বলে বিভিন্ন সময়ে প্রেমে পড়িনি, এমনটা দাবী করতে পারিনা। তবে এইযে বসন্তের আগমন, পলাশের আগুন, শিমুলে ঢেকে যাওয়া পিচের রাস্তা, হু হু হাওয়া, দোলের রং, আকাশের পরিবর্তন, কোকিলের ডাক, এবং  বসন্তের আগমন মানে প্রেমের সাইরেন এই পরস্পর সম্পর্কিত ক্যাটালিস্টদের অবদান সম্পর্কে আমার সন্দেহ বাতিক মন চিরকাল সন্দেহ প্রকাশই করে এসেছে।

বন্ধুরা শুনে টুনে অনেকেই বলে, আমার প্রেম চিরকাল স্বরবর্ণ ব্যাঞ্জনবর্ণ না শিখেই যুক্তাক্ষর শিখেছে। তাই প্রেমে অকারণ অস্থিরতা, উন্মাদনার অভিজ্ঞতা আমার ভাগ্যে ঘটেনি সে অর্থে।  অথচ আজন্মকাল শুনে আসছি, প্রেমের প্রথম স্তরের উন্মাদনা নিজের শিল্পবোধ থেকে শুরু করে সমস্ত ইন্দ্রিয়ের স্বাস্থ্যের জন্যে খুব ভালো। যাকগে, সেতো দিনে তিন লিটার জল খাওয়াও স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। তাই বলে কি সেটা খেতে পেরেছি?    

যাকগে, এই লেখাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ব্যক্তিগত সময়ের মধ্যবর্তী পর্যায়ে একটু তাকাতে, হয়।

আমি তখন অবসাদগ্রস্ত ছিলাম। একটা নতুন দিনের শুরু, যেকোনো উৎসব, ঋতুর  পরিবর্তন, এই সমস্ত সন্ধিক্ষণে অবসাদ বেড়ে যেতো হু হু করে। বসন্তের বাতাসের মতো। আগুনের মতো। প্রকৃতির যে কোনো তারতম্য আমার মধ্যে বিষাদ তৈরী করতো। হঠাৎ একদিন, সেই রকম একটা সময়ে যাদবপুর থানার কাছে অটো থেকে নেমে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছি, এইট বি’র দিকে। সে বছরের শীতকাল তদ্দিনে চলে গেছে সুপর্ণার দেশে। মানে এখন হিসেব করলে বুঝি, সদ্য  তখন বসন্ত এসে গেছে। তবে তাতে আমার আর কী! সবই জ্বালা ধরানো গ্রীষ্মের দুপুর বলে বোধ হয়। 

হেঁটে যাচ্ছি...হঠাৎ ঝড় শুরু হল, প্রচণ্ড হাওয়া, পথচারীরা ছিটকে এদিক ওদিক দৌড়চ্ছেন। বেশিরভাগ  লোক ছাউনি দেওয়া চায়ের দোকানে আশ্রয় নিচ্ছেন। এদিকে এত জোরে হাওয়া  বইছে, যে গাছের থেকে অধিকাংশ শিমুল ফুল রাস্তায় বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ছে। আমি কেমন হতভম্ভের মতো মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে। ক্ষণিকের মধ্যেই পিচ রাস্তা হয়ে গেল রেড কার্পেট। আর তারই মধ্যে হতভম্ভ আমি দাঁড়িয়ে ভাবছি, এরকম একটা চলচ্চিত্র দেখার সৌভাগ্য আমার হল? এরকম একটা অসামান্য মুহূর্তের সাক্ষী আমি রইলাম? এবং ঘটল সেই জীবনের ভেতরে, যে জীবনের প্রতি আমার হয় আক্ষেপ, নয় নির্লিপ্তি।  

ততক্ষণে ঝড় থেমে গেছে। ততক্ষণে মনে হচ্ছে, নিজের বোধের ঘরে তালা মেরে রাখা মূর্খ আমি চোখ মেলে দেখতেই জানলাম না। আমি সেদিন জীবনের প্রেমে শুধু পড়ে যাইনি, উঠেও দাঁড়িয়েছিলাম। তারপরেও অনেকগুলো বছর কাটিয়ে দিয়েছি  নানা রকম  অপ্রাপ্তি তে।  কিন্তু পাশাপাশি বেঁচে থাকার প্রতি প্রেমটা বেঁচে থেকেছে।  সময়ে অসময়ে মেট্রো করে যেতে যেতে দুম করে কোনও একটা ষ্টেশনে নেমে স্টেশনের বাইরে একটা বড় গাছের নীচে সিঁড়িতে একা  বসে চা খেয়ে কাটিয়ে দিয়েছি গোটা দু’ঘন্টা। ভালো লেগেছে। বাড়ি ফেরার পর মনে হয়েছে প্রেম করে ফিরলাম। রামকৃষ্ণ মিশন ইন্সটিটিউট অফ কালচার এর গেটের বাইরেই একটা গাছ, বিকেলে সব পাখি না হলেও হাজার হাজার পাখি ঘরে ফেরে সেখানে। এবং অদ্ভুত একটা আবহ তৈরী হয়। মাঝে মাঝে চলে গেছি, শুধু খানিকক্ষণ সেই আওয়াজ শুনব বলে। কবি সুভাষ মেট্রো ষ্টেশনের কাছে পঞ্চসায়র বলে পাঁচ খানা (সম্ভবত)জলাশয় আছে, তার যেকোন একটার ধারে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেছি। কিংবা লেকের দিকে এগিয়ে গেলে রাস্তায় যে গুলঞ্চ ফুলের গাছগুলো রয়েছে, তার নীচে গাছ থেকে টুপটাপ ফুল ঝরে পরার পর তা কুড়িয়ে নিয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে রেখেছি। ভালো লেগেছে। আনন্দ হয়েছে। বিভিন্ন লোকের সঙ্গে কথা বলে আমি একটা ব্যাপার সম্পর্কে ধারনা করতে পেরেছি যে, এই আনন্দগুলো আমরা সকলেই কম বেশি পাই, বা জীবন থেকে কুড়িয়ে নিই ঠিকই, কিন্তু এর মাধ্যমে জীবনের সঙ্গে যে আমাদের প্রেমটা গড়ে ওঠে, তাকে আমরা ঠিক চিহ্নিত করতে পারিনা। নিজেকে ঠিকমতো পড়তে বা চিনতে না পারার কুফল এটা। একটা বই সম্প্রতি পড়ছিলাম,লেখিকা একজন আমেরিকান মনস্তত্ববিদ। লেখিকার বা প্রটাগোনিস্টের প্রেমিক অপ্রত্যাশিত ভাবেই তার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ ঘটান এবং তারপরে লেখিকা স্বভাবতই সাংঘাতিক  মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যান। যেহেতু তিনি নিজে একজন মনোবিদ, তাই শুধুমাত্র  দুঃখের মধ্যে নিজের সমস্ত এনার্জি কেন্দ্রীভূত না করে খানিকটা নিজের এবং প্রাক্তন প্রেমিকের মনস্তত্বের বিশ্লেষণ করেও ব্যয় করেন। এবং সেই সময় খুব ইন্টারেস্টিং একটা বিষয় তার কাছে উঠে আসে, একটা জায়গায় তিনি  বলছেন, আমি কি তাকে মিস করছি? নাকি আমি আমার দ্বারা তৈরী করা তার আইডিয়া টাকে মিস করছি? এটা পড়তে গিয়ে আবার রবীন্দ্রনাথ অবধারিত মনে পড়ল,  ‘আমি আপন মনের মাধুরী মিশায়ে তোমারে করেছি রচনা’...  সত্যি তো, একজন মানবী কী করে সন্ধ্যার মেঘমালা হতে পারেন! বড়জোর প্রেমিকের সাধের  সাধনা হতে পারেন তিনি! আসলে  আমাদের মন যে কতটা মাধুরী মেশাতে পারে আর কত  কী রচনা করতে পারে, সে ক্ষমতার মূল্যায়ন আমরাই করিনা। তাই জীবনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অফুরন্ত প্রেমের সম্ভার কে চিহ্নিত করতে পারিনা।

আমার সেদিন ‘বেঁচে থাকা’ র সঙ্গে যে প্রেমটা হল, তারপর থেকে আর অপ্রেমের দায় নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হয়নি। আক্ষরিক অর্থে দখিন হাওয়াই সেই প্রেমের ক্যাটালিস্ট।

একক কবিতা সন্ধ্যা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...