অবাঞ্ছিত
দেবাশিস কুইলা
অফিস ফেরত তিয়াস তার মায়ের অন্তিম শয্যায় ওকে লেখা শেষ চিঠি পড়তে পড়তে দু চোখ ভিজিয়ে ফেলে। মা লিখেছে ; - বাবা তিয়াস , তোকে এটাই হয়তো তোর মায়ের লেখা শেষ চিঠি। একটা কথা না জানালে মরেও শান্তি পাবনা। আমি তখন কলেজ । শ্রাবন মাস। বিকেল থেকেই মুষল ধারায় বৃষ্টি।মা অর্থাৎ তোর দিদিমা সেদিন বাড়িতে নেই। সন্ধ্যায় কেমন ভয় ভয় ভাব। এটা কাটানোর জন্য আমাদের প্রতিবেশী আমারই সহপাঠী সুমন-কে ডেকে নিলাম টেলিফোনে অমলিন বিশ্বাসের উপর। বৃষ্টির জন্য থেকে গেল ঐ রাত। সকালে ফিরে গেল নিবিড় সম্পর্কের চেতনায় আমাকে বেঁধে। আমিও আবেগে আপ্লুত হইনি তা নয় । আমার এই শেষ মুহূর্তে তৈকে বলতে দ্বিধা নেই ; সেদিন আমার বিশ্বস্ত সহপাঠী আমার গর্ভে রেখে গেছে তার পৌরুষের ঔদার্য। সময়ের সাথে সাথে শরীরে প্রস্ফুটিত হল মাতৃত্বের চিহ্ন। লোক লজ্জা, সামাজিক কদর্যতা আর পারিবারিক লাঞ্ছনা উপেক্ষা করে সযত্নে আগলে রাখলাম আমার প্রথম ভালোবাসার অঙ্কুর। সুমনকে জানালাম সবকিছু। উপেক্ষার সাথে অস্বীকার করল তার পিতৃত্ব সঙ্গে আমাকে। দাঁতে দাঁত চেপে জীবন যুদ্ধে নামলাম কুমারী মাতৃত্বের স্বাদ নিয়ে। একটা ছোট কাজ জোগাড় করে নিলাম। একক মাতৃত্বের পরিচয়ে যথাসাধ্য চেষ্টায় তোকে লেখাপড়া শিখিয়েছি । চাকরি সূত্রে বিদেশে পাড়ি দিলি। আমার নিরুত্তরে অনেক বার জানার চেষ্টা করেও আর জানতে চাসনি তোর বাবার পরিচয়। আজ মৃত্যু শয্যায় শুয়ে তোকে জানাই আমার প্রতিবেশী সুমন সরকারের ঔরসে তোর জন্ম । কোথায় আছে সে এখন জানিনা। তবে তুই অবাঞ্ছিত নয়। এত দিন তোকে এ কথাটা না জানাতে পারার অক্ষমতার জন্য তোর অভাগী মাকে ক্ষমা করিস । এখন ঈশ্বরের কোন ডাক এসেছে বলতে পারবনা । ভালো থাকিস আমার সোনা বাবা । যে লোকেই থাকি তোর কাছে থাকব । মায়ের হাতের ভালবাসার শেষ অনুভূতি নিয়ে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাতের আকাশে।