procchod heontor mohool

স্বাদ হীনতার কথা ।। প্রিয়াঙ্কা
swadhinota
ডিভোর্স শব্দ টা আমি প্রথম শুনি আমার যখন ১০/১১ বছর  বয়স।  
আমার বাড়ি অসমের বরাক ভ্যালির ছোট্ট একটা ডিস্ট্রিক্ট করিমগঞ্জে। একান্নবর্তী পরিবারে জন্ম। একদিন একজন মহিলা এলো, ওর বাবা বাড়ি বাড়ি দুধ বিক্রি করেন, তিনি নিজেই নিয়ে এসেছেন সেই মহিলা কে। সকলের কথা বার্তা শুনে বুঝলাম, সেই মহিলা কে নিয়োগ করা হয়েছে, রান্নার কাজে। ওর বাবা যাওয়ার সময় বলে গেলেন আমার মা’কে, মেয়ের মাথা খুব গরম কিন্তু আবার ঝট করে ঠান্ডাও হয়ে যায়। মেয়েকে বলে গেলেন, মাথা ঠান্ডা করে থাকতে। আমার স্মৃতিশক্তি খুব দুর্বল হলেও সেদিনের কথোপকথন আর দৃশ্য আমার মনে থেকে গেছে। জানিনা কেন। বাবার চলে যাওয়ার দিকে মেয়ে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইল, সেটাও মনে আছে। ধীরে ধীরে গৌরী দি বাড়ির একজন হয়ে উঠল। আমার মায়ের খুব স্নেহের। আমিও প্রথম শুনলাম  ডিভোর্স শব্দ টা। গৌরী দি’র ডিভোর্স হচ্ছে। কেস চলছে। গৌরী দি প্রত্যন্ত গ্রামের। নিরক্ষর। কোর্টে যায়, যেদিন কেসের দিন ধার্য করা থাকে। পরবর্তী   দিন ক্ষণ কোর্ট থেকে লিখে দেয়, কিংবা আরও কিছু দরকারী তথ্য। সে কাগজ পড়তে পারে না, আমায় এনে দেখায়, আমি পড়ে দিই। এরই মধ্যে হয়তো বছর খানেকের মাথায় আমার মা অসুস্থ হয়ে  হাসপাতালে গেলেন এবং আর ফিরলেন না। জীবনের গভীরতম শূন্যতায় গৌরী দি’ কে মলমের মত পেয়েছি। পরবর্তীকালে বহু বহু বছর গৌরী দি বাড়িতে থেকেছে। আমিও পাশাপাশি বড় হয়েছি, আর বড় হতে হতে শুনেছি তাঁর জীবনের যন্ত্রণা কিংবা যুদ্ধের কথা। আর তারও অনেক বছর পরে এসে আজ বিশ্লেষণ করলে বুঝতে পারি জীবনের প্রথম স্বাদ হীনতার পরিচয় কিংবা স্বাধীনতার অধিকারের পরিচয় আমার হয়েছিল তাঁর হাত ধরেই। আর বুঝতে পারি কিছু শব্দের সঙ্গে আক্ষরিক অর্থে পরিচয় না থাকলেও একজন মানুষ তাঁর অন্তরের শক্তি দিয়েই সেইসব শব্দের নির্যাস নিজের জীবনে নিখুঁত ভাবে প্রয়োগ করতে পারে, এবং সেই প্রয়োগের কোনও প্রদর্শনও থাকে না। দেখেছি একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে থেকে, এক বর্ণ  লেখাপড়া না জেনেও একজন মানুষ কতটা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে পারে। কতটা শিরদাঁড়া কে ঋজু রেখে চলতে পারে। আসলে এইসব পারস্পরিক সম্পর্ক যুক্ত নয়, আমরাই এই যোগাযোগ স্থাপন করিয়ে রাখি, আমাদের ধারণায়।
তাঁর বিয়ে হয়েছিল যার সঙ্গে, সেই অত্যাচারী পুরুষটির এটা দ্বিতীয় বিয়ে, প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে। সেই স্ত্রীর সন্তানেরা মোটামুটি গৌরী দির সম বয়সী। গৌরী দি’র মনে হয়েছিল, সেই বিয়ে যথাযোগ্য সম্মানের নয়, তাই এই বিয়ে মেনে নিতে পারে নি। সিদ্ধান্ত নিল বেরিয়ে আসার। শুধু তাই  নয়, ডিভোর্সে রাজি হচ্ছিল না দেখে কেস করল গৌরী দি  এবং সেই কেসের টাকা জোগান দেওয়া তাঁর বাবার পক্ষে সম্ভব হবে না দেখে সিদ্ধান্ত নিল রান্নার কাজ করবে। ফলত আমাদের দেখা। সেই কেস বেশ কয়েক বছর চলেছিল। কেসে গৌরী দি হেরে যায়। সম্ভবত তাঁর প্রাপ্য দাবী পাওয়া হয়ে ওঠে না। কিন্তু ডিভোর্স টা হয়েছিল। এই হেরে যাওয়া আবারও আক্ষরিক একটি শব্দ কেই হারিয়ে দেয় আসলে। ‘হার-জিত’।  
কেন অবতারণা করলাম এই  ব্যক্তিগত অধ্যায়টির? কারণ মাঝে মাঝেই মনে উঁকি দিয়ে যায়। কেন উঁকি দিয়ে যায়? কারণ স্বাবলম্বী হতে হতে একেক সময় মনে হয়েছে আমি সেইসব বিশেষ সুবিধা প্রাপ্ত মানুষের একজন (পড়া ভাল নারী দের একজন)  নিজের চারপাশের বৈষম্য মূলক আচরণ  কে এড়িয়ে যাওয়া যাদের কাছে সহজতর। কারণ তাদের অভিজ্ঞতায়, চিন্তনে মননে এরকম বহু উদাহরণ রয়েছে যাদের অনুসরণ করে কিংবা অনুপ্রাণিত হয়ে এগিয়ে যাওয়া যায়। যাদের মূল পরিবেশ তাদের এগিয়ে যেতে কখনও সাহায্য করে, কখনও কিছুই করে না, কখনও  পেছনে টানে কিন্তু তাদের কাছে শক্তি সঞ্চয় করে রাখা থাকে সেসব কে ঠেলে এগিয়ে যাওয়ার।
কিংবা তাদের কাছে এমন উপাদানও রয়েছে  যার সাহায্যে এই সব কঠিন রাস্তা খানিকটা সহজ হয়ে পড়ে। কিন্তু গৌরী দি’র সেসব কিছুই ছিল না। ছিল শুধুমাত্র আত্ম প্রত্যয় আর অদম্য জেদ। এই আত্মবিশ্বাসে ভর করে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আজ থেকে বহু বছর আগে একটা প্রত্যন্ত  গ্রামে যেখানে স্বামী বিচ্ছিন্ন মহিলাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে কেউ দ্বিধা করবে না একবারও। তাঁর কোন ধারণা ছিল না মেরুদণ্ডী প্রাণী বলতে আমরা আসলে এখন কী বুঝি। কিন্তু নিজের মেরুদন্ড সোজা রাখতে তাঁর এই জ্ঞানের  প্রয়োজনও ছিল না।   
যেকোনো  মাইক্রো ইস্যু আর ম্যাক্রো ইস্যুর মধ্যে আসলে তফাত শুধু আয়তনেই হয়। সারবস্তু থাকে এক। রাষ্ট্র  হোক, কিংবা রাজ্য, ধর্ম হোক কিংবা পরিবার। কিংবা সম্পর্ক। আসলে মূল বিষয় বিভেদ বা বৈষম্যর মুখোমুখি আমরা কীভাবে দাঁড়াতে পারছি। ক্ষমতার অপব্যবহার কে কতটা রোধ করতে পারছি।  নিজের অধিকার সম্পর্কে বোধ টাই আসল। আর সেই অধিকার বোধ সম্মানের সঙ্গে আদায় করার দৃঢ়তা। আমার চারপাশের পরিবেশ সেই অনুকুল আবহাওয়া নাই দিতে পারে। কিন্তু আমি নিজেই নিজেকে সেই স্বাদ হীনতা থেকে মুক্তি দিতে পারি।  
আসলে বরাবর আমার নিজের দেশের সঙ্গে ব্যক্তি হিসেবে আমার সম্পর্ক নিয়ে ভাবতে গিয়ে মনে হয়েছে  ভারতবর্ষের থেকেও বেশি শ্রদ্ধা আমার রয়েছে ভারতবর্ষের সংবিধানের প্রতি। কারণ সংবিধান যেভাবে আমার দেশ কে আমার সামনে উপস্থাপন করছে আর আদতে যে ভারতে আমরা রয়েছি তার মধ্যে তো বিস্তর ফারাক! কোন একটি  রাজনৈতিক দলের সমর্থনে থাকতে গিয়ে দেখেছি, সেই দলের মেনিফেস্টো আমাকে বেশি আকর্ষণ করেছে। এবং ক্ষণে ক্ষণে ‘দল’এর প্রতি আস্থা হারিয়েছি। আস্থা রাখাটা যেমন গণতান্ত্রিক, আস্থা চলে  যাওয়াটাও সমান ভাবে গণতান্ত্রিক কেন নয় সেটাই প্রশ্ন। অথচ পাঁচ বছর অন্তর নির্বাচন বদলে নেওয়ার অধিকার ও কিন্তু গণতন্ত্রই আমাদের দেয়। আসলে আমরা এত কিছু জেনে, আলোচনা সভা উত্তপ্ত করেও ব্যক্তিগত স্তরেই স্বাদ হীনতা কে চিহ্নিত করে উঠতে পারিনা, তো সমষ্টিগত ভাবে চিহ্নিত করতে পারব না, সেটাই স্বাভাবিক। কখনও চিহ্নিত করতে পারলেও শুধুমাত্র নিজের মেরুদন্ডের ওপর নির্ভর করে বাকি সব নস্যাৎ  করে দিতে পারি না।  সেটাই ভাবার, সেটাই বলার।     
 
 
 

কবি প্রণাম : হে অন্তর



Card image




কবি প্রণাম : হে অন্তর   দেখেছেন : 1688

আমাদের রবীন্দ্রনাথ ।। সোমনাথ শর্মা
Somnath Sharma ।। সোমনাথ শর্মা

  রবীন্দ্রনাথ। এই ভদ্রলোক সম্পর্কে আমাকে লিখতে হবে! কঠিন কাজ। ও কাজ আমি করব না। আমি যাদের চিনি তাদের নিয়ে লিখব। রবীন্দ্রনাথকে আমরা কত ভালোবাসি তার সপ্রমাণ ব্যাখ্যায় যাব খানিকটা। একজন লেখক বা যে কোনো পেশার সৎ লোক মনীষী হয়ে ওঠেন তাঁর…

May 7, 2020
Card image




কবি প্রণাম : হে অন্তর   দেখেছেন : 3186

যে-অন্ধ বৃষ্টি আনতে যাচ্ছে ।। সুকান্ত সিংহ
Sukanta Sinha ।। সুকান্ত সিংহ

    আমার কিছু অনিবার্য বিষণ্ণতা ছিল। আমার কিছু অনিবার্য বিপন্নতা ছিল। আমার কিছু অনিবার্য আকুলতা ছিল। ছিল। আছে। থাকে। হ্যাঁ, আমার কিছু অনিবার্য আশ্রয়ও ছিল। সেই যে শিলাবতীতে নৌকো বাঁধা থাকত, আমি বাসের জানলা দিয়ে দেখতে পেতুম, তারা দুলছে জলের ঢেউয়ে…

May 7, 2020
Card image




কবি প্রণাম : হে অন্তর   দেখেছেন : 3466

যার নাম রোদ ।। লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল
Laxmikanta Mandal ।। লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল

           'তবে পরানে ভালোবাসা কেন গো দিলে              রূপ না দিলে  যদি বিধি হে ' -  এ আক্ষেপ নিজের কাছেই । ভালোবাসা চাই  - ভালোবাসা চাই  - ভালোবাসতে চাই - ভালোবাসতে চাই , আজ চিৎকার করে বলতে হচ্ছে । …

May 7, 2020
Card image




কবি প্রণাম : হে অন্তর   দেখেছেন : 3325

‘চিরটাকাল সঙ্গে আছে জড়িয়ে লতা’ ।। প্রিয়াঙ্কা
Priyanka ।। প্রিয়াঙ্কা

      শব্দের অভাব বোধ হয়, সমুদ্রের বা আকাশের মতো অনন্তের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে। তাঁকে নিয়ে কিছু না লিখতে যাওয়া মানে ঠিক তাই। যাকে বাঙালীর বেশ বড় একটা অংশ একটা অলিখিত ব্যাকরণ বইএর ভেতর রেখে দিয়েছে।  স্বরলিপির অক্ষরের মধ্যে রেখে দিয়েছে। পাঞ্জাবী…

May 7, 2020
Card image




কবি প্রণাম : হে অন্তর   দেখেছেন : 2828

ব্যক্তিগত অন্তরকথন ।। অমিত মাহাত
Amit Mahata ।। অমিত মাহাত

    মা শালপাতা তুলে আনত বন থেকে। সেলাই করত। অন্যের বাড়িতে কখনও ধানসেদ্ধ চাল পাছড়ানো থেকে কাজে ভোজে ছোঁচগোবর সাফসুতরা। আমার তখন অতি অল্প বয়স। মা কাজে চলে যেত। সকালে। ফিরত সাঁঝে । আমার হাতে দেদার সময়। কীভাবে যে খরচা হত …

May 7, 2020
Card image




কবি প্রণাম : হে অন্তর   দেখেছেন : 1669

‘চিরসখা, ছেড়ো না মোরে..’ ।। আনন্দরূপ নায়েক
Anandrup Nayek।। আনন্দরূপ নায়েক

    পুরাতন বিকেল পেরিয়ে হলুদ ফুলে ভরা বাবলা গাছের সারি। চলে যাওয়া মাটির রাস্তাটি পায়ে পায়ে ঢুকে পড়ে প্রিয় বাড়িটির ভেতর। সাঁঝ নেমে আসে। দখিনের বায়ু বয়। মৃদু আলো জ্বলে ওঠে। এক একদিন বাবা তার হারমোনিয়াম নিয়ে বসে। গান গায় একের…

May 7, 2020
Card image




কবি প্রণাম : হে অন্তর   দেখেছেন : 3805

ঘরের ডাক ।। কেশব মেট্যা
Keshab Metya ।। কেশব মেট‍্যা

  ‘পিসেমশায়! আমি কি ঐ উঠোনটাতেও যেতে পারব না?' –এই শব্দবন্ধ আজ  যেন বুকের মাঝে বারংবার ছ্যাঁৎ করে ছুঁয়ে যাচ্ছে । অমলের মতো কতো কোমলমুখের এখন এই একটাই আর্তি। দেওয়াল তোলা বর্গফুটের কারাগারে অসুখভয়ে বদ্ধ শৈশব। নির্ঘুম রাস্তার বুকেও শ্মশানের নিস্তব্ধতা।  নিজের…

May 7, 2020
Card image




কবি প্রণাম : হে অন্তর   দেখেছেন : 2124

বন্ধু, রহো রহো সাথে...।। পাপিয়া ভট্টাচার্য
Papia Bhattacharya ।। পাপিয়া ভট্টাচার্য

     মনে হচ্ছে অনন্তকাল ধরে এরকম স্থবির একটা সময়ের ভেতর আছি। দিন মাস সব গুলিয়ে গেছে, ঝিমিয়ে কাটছে সময়। রোজ ভাবি, আজ যেন কী বার!  কত তারিখ! কিছুতেই মনে আসে না  সহজে। তার মধ্যে এই একটা সপ্তাহ  যেন  একদম…

May 7, 2020
আরও পড়ুন

কবি প্রণাম : হে অন্তর- সংখ্যায় প্রকাশিত লেখা সমূহ



একক কবিতা সন্ধ্যা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...