utsab sankha anugolpo 2018
ভাঙা ব্রিজ
ব্রতী মুখোপাধ্যায়
বকুলপার্ক। বকুলপার্ক রক্ষিত একলাই জমিয়ে রাখে। ভাঙা ব্রিজ পার হয়ে সে আসে।
বিয়ের পর আমেরিকায় চলে গেছে মেয়ে। ছেলে তবে রয়েছে। সেই কথাই তুলল মজুমদার--- একটা ঠ্যাং তোমার তবু আছে। আমার একটাই। থেকেও নেই। দুবছরে একবার আসছে। পরে আর পারবে না।
রক্ষিত মজুমদারের মুখের দিকে তাকায় না। সিংহরায় সুতো ধরে--- লেখাপড়ার হদ্দমুদ্দ করেছে সব। রক্ষিতটার চোদ্দ পুরুষের পুণ্যফল। পারিজাতের সমান একটাও দেখিনি। ফি-বছর ক্লাসে ফার্স্ট হত, এত এত প্রাইজ, রেজাল্ট বের হলেই প্রণাম করতে আসা। সেদিনও এসেছে। আমার খান স্কুলেই যেতে চাইত না।
সেনগুপ্ত থামিয়ে দিল--- তোরও তবু ভাল। স্কুলে পড়ায় এখন। মাবাপকে ছেড়ে কোথাও যায়নি।
চাটুজ্যে বলল--- তোর অনুরাগও ভাল ছেলে। চাকরি পেয়েছে ব্যাঙ্গালোরে, ভাল চাকরি। কলকাতায় পেলে তোর সঙ্গেই থাকত।
সেনগুপ্ত সিগারেট ধরিয়ে বলল--- বলা যায় না। সবাই কিন্তু রক্ষিতেরটার মতো হয়নি। আমেরিকায় সেটল করতেই পারত। বাপমায়ের সঙ্গে থাকবে বলে দেশে ফিরে এসেছে।
বকুলগাছে পাখিরা সব এতক্ষণে। তীক্ষ্ণস্বর কিচিরমিচির তাদের। তাদের বাপমাভাইবোন চেনা যায় না।
আজকের সন্ধেটা জমল না।
সিংহরায় বলল--- নাতনিটাকে নিউ জার্সিতে কোথায় কোন স্কুলে দিয়েছে। তার নাকি সর্দিজ্বর সারছে না।
চাটুজ্যেদের ছেলেপুলে নেই। দুঃখ আছে, বলে না, চুপচাপ সবার কথা শোনে।
অপরূপ, রক্ষিত জানে বরাবরই অসুস্থ, গতকালও গলা জড়িয়ে হনুমানের লঙ্কাকাণ্ড শুনেছে, শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েছে।
অন্ধকার নামতেই তিন-চারজন বকুলপার্কে এল। রোজই আসে। এলেই রক্ষিতরা বাড়ির পথ ধরে। পারিজাতের চেয়ে বয়েস এদের কম। রক্ষিত জানে না কাদের বাড়ির এরা। জানে চাকরিবাকরি জোটেনি, জুটবেও না। গাঁজা টানবে অন্ধকারে বসে।
গতকাল অপরূপ ঘুমিয়ে পড়ার পর পারিজাত বাবার ঘরে এসেছিল। কদিন থেকে রক্ষিত আন্দাজ করছিল কিছু বলতে চায়।
--- তোমার শরীর এখন কেমন?
--- ভাল।
--- প্রেসার?
--- নর্মাল।
--- হজমে কোনো প্রব্লেম হচ্ছে?
--- না।
আগে কোনোদিন ছেলে এসব জিজ্ঞেস করেনি। টিভির খবর বন্ধ করে রক্ষিত--- কিছু বলবি?
পারিজাত অকুণ্ঠিত--- হায়দ্রাবাদে বড় অফার পেয়েছি। অনসূয়াও পেয়েছে। নেক্সট মানডে যেতে হবে।
রক্ষিত বলল--- ভাল। গুড। আমি কিন্তু যাব না।
এইটুকুই।
রক্ষিত ভাবল ওয়াকিং স্বাস্থ্যের জন্যে ভাল। ভাঙা ব্রিজটার কাছে এসে মনে হল দেরি হচ্ছে, ফিরেই যাই। একলা থাকতে ভয় পায় অপরূপ গতকালও বলেছে।