logo corona

রবিবাসরীয়র জন্য গল্প ।। শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী
swadhinota
ডোরবেল বাজাবার সময়  অনীক ভেবেছিল একটা রূপকথার পরি দরজাটা খুলে দেবে। কী যেন নাম বলেছিল ফেসবুকে? নির্ঘাত জালি নাম। আজকাল ওইসবই তো চলে। ও হ্যাঁ । মনে পড়েছে। কুয়াশা।
             অথচ যে মেয়েটা অনীককে চমকে দিয়ে দরজাটা খুলে দিল, তার নাম অনায়াসে কুয়াশা হতে পারে। মিশমিশে কালো মুখ। টানাটানা চোখে দীঘি নয়, কালবৈশাখীর অস্থিরতা। এই মেয়ের নাম কুয়াশা হবে না তো কার হবে? বেশ কালোই না হয় হলো। অনীক ভাবে। ওই যে কলেজে শুনেছিল। লাইট নেভালে সব সমান।বসতে বলে কুয়াশা ভিতরে চলে গেল। খানিক পরে চলে এল দুহাতে গেলাস নিয়ে। স্কোয়াশ।
–আমি কিন্তু স্কোয়াশ খাই না। বিরক্ত হয়ে বলল অনীক
–ওটা স্কোয়াশ না। স্ক্রু ড্রাইভার। ভদকা মেশানো।আমি ব্লেন্ডটা জানি। খেয়ে দেখো। ভালো লাগবে।
           তিনমাসের ফেসবুকে চ্যাটাচ্যাটি।চাটাচাটিই বলা ভালো। একজন যাদবপুর ইউনিভারসিটি। অন্যজন কলকাতা। একজন বিজ্ঞান। অন্যজন সাহিত্য। ভাবা যায় না মাইরি।মনে মনে ভাবে অনীক। এতোটা সে আশা করেনি।
এক্কেবারে প্রথম আলাপেই মদ্যপান। নাহ জমে যাবে মনে হচ্ছে। হোক কালো। এই কুয়াশা মেয়েটার অ্যাটিচিউড আছে। অনীক ভাবে।
          কুয়াশা এবার অনীকের মুখোমুখি বসে।একটা ফাটা ডেনিম আর গোলাপি টপ। টপের ভিকাটটা যেখানে মিশেছে সেখানে একটা গিরিখাতের সুচনাপথ দেখতে পাচ্ছিল অনীক।
অনীককে অবাক করে কুয়াশা নিজেই জামার বোতাম খুলতে শুরু করলো।"চলো। টাইম কম।ওটা এনেছো তো। বলে দিয়েছিলাম। আই মিন টু বি সিম্পল। নো কমপ্লিকেশন।"
অনীক এইসব ব্যাপারে ওস্তাদ। ব্যাগ হাতরালে একডজন কন্ডোম বেরিয়ে পড়বে অনায়াসে।নারী শরীর তার নিজের বাড়ির বাইরের বারান্দার থেকেও বেশি ভালো করে চেনা।পার্থক্য শুধু, অনীক বাড়ির বারান্দাটা অ্যাভয়েড করে। ওখান থেকে পড়ে গিয়ে বাবার অ্যাক্সিডেন্টটা হয়। সে দেখেনি অবশ্য নিজের চোখে। তখন সে ছয়। প্রতিবেশী নেহাআন্টি বলেছে। আন্টি এটা বলেনি যে বাবা নিজে থেকেই পড়ে গিয়েছিল নাকি তাকে কেউ পিছন থেকে ধাক্কা মেরে...
সে যা হোক। মেয়েমানুষের ক্ষেত্রে অনীক দুকানকাটা। প্রতিবার নতুন বারান্দায় যায় সে।রেলিঙ ধরে বসে থাকে। পা দুটো আলতো করে হাওয়ায় ভাসিয়ে দেয়। ভাবতে চেষ্টা করে পড়ে যাবার ঠিক আগে বাবার কেমন মনে হয়েছিল ভিতরভিতর। ভাবতে ভাবতেই তার চরম মুহূর্তটুকু চলে আসে! কী অদ্ভুত। অনীক ভাবে।দুটি বিপরীত মেরু। অথচ তাদের কী অপরূপ সমাবর্তন। কুয়াশা ততক্ষণে অনেকটা এগিয়ে গেছে। অনাবৃত বুক নিয়ে সে এগিয়ে আসছে অনীকের দিকে। কিন্তু এ কী! অনীক দেখলো, অন্তত ডোরবেল বাজাবার পরেও এতোটা ধাক্কা খায়নি সে। মানে কৃষ্ণকলি তো হতেই পারে কিন্তু ওই দাগটা!
–ঘাবড়ে গেলে? চাপ নেই। দাঁড়াও, লাইট নেবাই।তুমি রেডি হয়ে নাও ততোক্ষণ।
অনীক দেখতে পেল অনায়াসে মেখলা উড়িয়ে যেন একটা নদী বয়ে গেল সুইচবোর্ডটার দিকে।কিন্তু সে কী ধ্বজ হয়ে গেল? উত্তেজনা আসছে না কেন তার? আলোটা নিভে গেল। একটা কলকল শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ এগিয়ে আসছে ক্রমশ, আর অনীক ভয়ে সিঁটিয়ে যাচ্ছে ।"ওই দাগটা..."
কুয়াশা সহজ হয়, "কাম অন। আসল কাজটা তো নীচে। উপরেরটা দাগটা ধরে নাও জাস্ট একটা অ্যাপ। ডাউনলোডটা করো আসিক আমার। কী ভাবছো? আমি বেশ্যা। তা ভাবো।ছেঁড়া গেছে আমার। চলো সোনা। স্টার্ট ইট"
অনীক তবু থরথর করে বলে, "না। উই নিড টু টক। আলো জ্বালাও"
–কেন? আমি খারাপ দেখতে? নিজে থেকে একটা বাইশ বছরের মেয়ে তোর জন্য বেশ্যামাগির মতো জামা জিন্স খুলে দিল। আর তুই লাগাতে ঘেন্না মারাচ্ছিস? শালা হারামি। ছিঃ।
অনীক অন্যসময় হলে ভিরমি খেত। ফেসবুকে লোলিতা বিশাখা নিয়ে অপূর্ব পদাবলী রচয়িতা কুয়াশার মুখে এ কেমন ভাষা? কিন্তু সেই মুহূর্তে অনীক ভিরমি খেলো না। তার আলোটা দরকার।খুব বেশি করে। ওই ভয়ানক দাগটা...
–শুনবে??
কুয়াশা শান্ত হয়ে আসে। "তাহলে শোনো। তখন পাঁচ বছর বয়স আমার। শহরের পাঁচতারা পল্লীর পাঁচতারা আবাসনের বাসিন্দা আমরা।অথচ সেখানকার তারারা সব কবে জ্বলতে জ্বলতে নিভেই গেছে। সেই অনেকগুলো জ্বলে যাওয়া তারাদের মধ্যে একটি তারা ছিল আমার মা। বাবা রোজ অফিসের পার্টি করে দামী দামী পারফিউম লাগিয়ে বাড়ি ফিরতো। তারপর মাকে চুলের মুটি ধরে পেটাতো। আমি তখন পাশের ঘরে আঁকার খাতা আগলে মটকা মেরে পড়ে থাকতাম। কিন্তু একদিন আমার সেই বিড়ালঘুম ভেঙে গেল। নাকে একটা বিশ্রি পোড়া গন্ধ ধক করে ঢুকে এলো। এই গন্ধটা কোনও পারফিউমের নয়। দৌড়ে গেলাম পাশের ঘরে।গিয়ে দেখি মা জ্বলছে। বাবা মদ ঢেলে দেশলাই দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে মাকে। মাকে বাঁচাবার অনেক চেষ্টা করেছিলাম জানো? তখন তো বাচ্চা বয়স। মাথায় আসেনি। জড়িয়ে ধরেছিলাম মাকে। বুঝিনি মা আর তখন মা নেই।তন্দুরি হয়ে গেছে। মাকে বাঁচাতে গিয়ে বুকটা পুড়ে গেল আমার। বাইরের ঘাটা শুকিয়ে গেল।ভিতরেরটা শুকোলো না। বুকের দাগটা মেলালো না। ছোটোবেলা থেকে চুলকে চুলকে মস্ত কিলয়েড হয়ে গেল। সারা দিন জ্বালায়। আমি ছেলেদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করি। তারা মজে যায় তোমার মতো। ডেকে আনি। সঙ্গ করি। ওদের ঘামের গন্ধে সেই পোড়া গন্ধটা আবার ফিরে পাই। ওই গন্ধে আমার মা জড়িয়ে আছে......."
–থাক কুয়াশা। আর নয়......
–ভয় পেলে?
–না। আলো জ্বালো।
অনীক নিজেকে গুছিয়ে নিতে গিয়ে দেখে একটা গোলাপী আভার মতো কুয়াশা বসে পড়ছে সোফায়। তার চোখে জল। কুয়াশা ভেঙে বৃষ্টি নেমে এসেছে। অনীক বলে।
তুমি বলেছিলে পদাবলী লিখতে পারো আমার জন্য, মনে আছে কুয়াশা?
কুয়াশা ঘাড় নাড়িয়ে চুপ করে বসে থাকে।
–আমি কিন্তু তুমি যা যা লিখেছো সব হুবহু মুখস্থ বলতে পারি।
–ধুস। মিথ্যে
–সত্যিই। তবে আজ শোনাবো না। গিটারটা সঙ্গে নেই। সুর দিয়েছি ওদের। পরেরদিন গেয়ে শোনাবো...
কুয়াশা আর অনীক হঠাৎ এমন করেই বাস্তব চরিত্র থেকে কল্পনার চরিত্র হয়ে গেল। কে জানে আর তাদের দেখা হয়েছিল কিনা।
 
 
 

একক কবিতা সন্ধ্যা



সহজ কবিতা সহজ নয় কঠিনও নয়



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...